সূরা বাকারা । রুকু -১৯। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কঠিন পরীক্ষার প্রয়োজন।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা । রুকু -১৯।
আয়াত ১৫৩ - ১৬৩
সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কঠিন পরীক্ষার প্রয়োজন।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
১৫৩ নং আয়াত: সাহায্য চাইবার প্রক্রিয়া।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৩) হে মুমিণগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধারণ করে সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
ধৈর্য ধরার অর্থ হল, সাহায্য প্রার্থনার প্রক্রিয়ায় দুর্বল হবেন না। তিনি দৃঢ় বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর উপর । তিনি সাহায্য প্রার্থীর প্রর্থনা অবশ্যই শুনবেন।
মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
১৫৪ নং আয়াত: আল্লাহর পথে শহীদ হবার মর্যাদা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৪) আল্লাহর পথে যাহারা নিহত হয় তাহাদেরকে মৃত বলিওনা, বরং তাহারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করিতে পার না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যারা ধর্মের ব্যাপারে যারা মারা (শহীদ) হিয়েছে তারা মৃত নয়, জীবিত।
এই পৃথিবীর জীবিত মানুষ তা বুঝতে পারে না।
১৫৫, ১৫৬, ১৫৭ নং আয়াত: ধৈর্য ধরার ফযিলত: ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৫) আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করিব। তুমি সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৬) যাহারা তাহাদের উপর বিপদ আপতিত হইলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিত ভাবে তাঁহার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৭) ইহারাই তাহারা যাহাদের প্রতি তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর ইহারাই সৎপথে পরিচালিত।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি মানুষকে কিছু বিপদ অবতীর্ণ করে পরীক্ষা করেন।
যেমন-ভয় ((শত্রুভীতি) , ক্ষুধা (দুর্ভিক্ষ), ধন-সম্পদ (সম্পদের হানি) এবং জীবনের (অসুস্থতা, বার্ধক্য ও মৃত্যুবরণ) ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করেন।
এসব বিপদের সময় যারা ধৈর্য বজায় রাখে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ।
ধৈর্যশীল তাদের বলা হচ্ছে যারা বিপদগ্রস্ত হয়েও উচ্চারণ করে “আমরাতো আল্লাহরই এবং নিশ্চিন্তভাবেই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করব।
তাদের প্রতি মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ।
বিপদে ধৈর্য অবলম্বনকারীরাই সৎ পথ প্রাপ্ত।
১৫৮ নং আয়াত: সাফা ও মারওয়াতে সায়ী করা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৮) নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যে কেহ কা’বাগৃহের হজ্জ কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এই দুইটির মধ্যে সা’ঈ করিলে তাহার কোন পাপ নাই আর কেহ স্বঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করিলে আল্লাহ তো পুরষ্কারদাতা , সর্বজ্ঞ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়কে হজ্জ্বের স্থান রূপে নির্ধারণ করা হয়।
এখানে তওয়াফ করা ওয়াজিব।
স্বেচ্ছায় যারা সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করেন।
১৫৯, ১৬০, ১৬১ ও ১৬২ নং আয়াত: সত্য গোপন এবং হঠকারীদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং তওবাকারীকে ক্ষমার প্রতি শ্রুতি।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫৯) নিশ্চয়ই আমি যেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও হিদায়াত অবতীর্ণ করিয়াছি মানুষের জন্য কিতাবে উহা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যাহারা উহা গোপন রাখে আল্লাহ তাহাদেরকে লা’নত দেন এবং অভিশাপকারীরিাও তাহাদেরকে অভিশাপ দেয়।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬০) কিন্তু যাহারা তওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, ইহারাই তাহারা যাহাদের তওবা আমি কবুল করি, আমি অতিশয় তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬১) নিশ্চয়ই যাহারা কুফরী করে এবং কাফিররূপে মারা যায় তাহাদের উপর লা’নত আল্লাহ এবং ফিরিশতাগণ ও সকল মানুষের।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬২) উহাতে তাহারা স্থায়ী হইবে। তাহাদের শাস্তি লঘু করা হইবে না এবং তাহাদেরকে কোন অবকাশও দেওয়া হইবে না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ তাঁর স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ নির্দেশনা তাঁর প্রেরিত ঐশী কিতাবের মাধ্যমে জানিয়েছেন।
কিন্তু অনেকেই তা গোপন করে।
আল্লাহতায়ালা তাদের অভিশাপ দেন।
অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়।
আল্লাহ তিন শ্রেণীর লোককে ক্ষমা করেন।
(ক) যারা তওবা করে ফিরে আসে।
(খ) নিজেকে সংশোধন করে।
(গ) আল্লাহ যে সত্য পাঠিয়েছেন তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করে।
কুফরকারীরা মারা গেলে আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সব মানুষ তাদের কে অভিশাপ দিবে।
তারা চিরকাল অভিশাপের মধ্যে থাকবে এবং কোনভাবেই তা লাঘব করা হবে না।
১৬৩ নং আয়াত: আল্লাহর একত্ব।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬৩) আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়।
তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।
তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।
অনুধাবন:
সালাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ সাহায্য চাইতে বলেছেন। সালাতে আল্লাহর ধ্যানে পূর্ণ মনোনিবেশ করে প্রার্থনা করলে অবশ্যই সাহায্য প্রার্থীর মনোকষ্ট দূর হয়ে যায়।
বিপদে, দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া মানুষের একান্ত কর্তব্য। যারা ইমানদার, তারা বিপদে ধৈর্য হারায় না এবং বিচলিত হয় না। তারা ধীর চিত্তে সহনশীলতার সাথে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে বিপদের মোকাবিলা করে। অর্থ্যাৎ সে নিজের ভিতরের শক্তি ও পাশাপাশি আল্লাহর অসীম শক্তির উপর ভরসা করে বিপদের মোকাবিলা করে।
শহীদরা অত্যন্ত সম্মানিত। তাদের মৃত বলে অসম্মান করা যাবে না।
মহান আল্লাহ এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ যাকে যেরকম যোগ্যতা দিয়েছেন, সে অনুপাতেই পরীক্ষা নিবেন। আল্লাহ এই পরীক্ষার সময় মানুষ কিরকম আচরণ করে তা বিবেচ্য বিষয়। মহান আল্লাহ মানুষকে বিপদে ফেলে তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করে এবং আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা যাচাই করে তাকে পুরস্কৃত করবেন।
যারা অভিশপ্ত তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত পাবে না। সে সাথে সাথে ফেরেশতা এবং বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর অভিশাপও তাদের উপর বর্তাবে।