সূরা বাকারা । রুকু ২০ ।ঐক্য বজায়।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুনদয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা । রুকু ২০
আয়াত: ১৬৪ -১৬৭
ঐক্য বজায়।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
১৬৪ নং আয়াত:: প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬৪) নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে, যাহা মানুষের হিত সাধন করে তাহা সহ সমুদে্র বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ আকাশ হইতে যে বারিবর্ষণ দ্বারা ধরিত্রীকে তাহার মৃত্যুর পর পুনজীবিত করেন তাহাতে এবং তাহার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রহিয়াছে।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ এই আয়াতে বিশ্ব জগতের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যা আমাদের চোখের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিনি চিন্তাশীল লোকদের এসব নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করতে বলেছেন। সে সাথে বলেছেন আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী।
রাত ও দিনের একটানা আবর্তন।
নৌযান যা সাগরে ভেসে বেড়ায়।
আকাশ থেকে পানি বর্ষণ।
তার মাধ্যমে মৃত ভূমিতে ফসল উৎপাদন।
এর উপর যাবতীয় জীবজন্তুর বিচরণ ।
বাতাসের গতি পরিবর্তন।
আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে জমে থাকা মেঘমালার সঞ্চারণ
১৬৫ নং আয়াত:মুশরিকদের নিন্দাবাদ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬৫) তথাপি মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার অনুরূপ তাহাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু যাহারা ঈমান আনিয়াছে আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় তাহারা সুদৃঢ়। জালিমরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিলে যেমন বুঝিবে, হায়! এখন যদি তাহারা তেমন বুঝিত, সমস্ত শক্তি আল্লাহরই এবং আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর একত্বের নিদর্শন দেখা সত্বেও অনেকে এসব বস্তুর উপাসনা করে।
তারা এসব বাহ্যিক উপকরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না।
তাদের উপাসনার বস্তুকেই ভালবাসে।
তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর অস্তিত্বকে অম্বীকার করে।
কিন্তু যারা ইমান এনেছে তারা আল্লাহকেই সর্বাপেক্ষা ভালবাসে।
তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত বুঝবে না তারা কি অপরাধ করেছে।
তারা ভুলে গেছে সমস্ত শক্তি আল্লাহর।
আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর।
১৬৬ নং আযাত:: পারলৌকিক শাস্তির কঠোরতা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬৬) যখন অনুসৃতগণ অনুসরণকারীদের দায়িত্ব অস্বীকার করিবে এবং তাহারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে ও তাহাদের মধ্যকার সমম্ত সম্পর্ক ছিন্ন হইয়া যাইবে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬৭) আর যাহারা অনুসরণ করিয়াছিল তাহারা বলিবে, 'হায়! যদি একবার আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটিত তবে আমরাও তাহাদেদর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করিতাম যেমন তাহারা আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করিল। এইভাবে আল্লাহ তাহাদের কার্য়াবলী তাহাদের পরিতাপরূপে তাহাদেরকে দেখাইবেন আর তাহারা কখনও অগ্নি হইতে বাহির হইতে পারিবে না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হাশরের দিন অবিশ্বাসীরা যাদের অনুসরণ করত তাাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।
তারা অবিশ্বাসীদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করবে।
সে সময় তারা স্বচক্ষে শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।
অবিশ্বাসী অনুসরণকারীরা অনুশোচনা করবে এবং এই পৃথিবীতে আবার ফিরে আসতে চাইবে।
তখন ভাববে আমরা এসব লোকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম।
কিন্তু সে ফিরে আসা যাবে না।
দোযখের আগুনে জ্বলতে হবে।
অনুধাবন:
আল্লাহকে জানতে হলে এই প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে আল্লাহর নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ প্রকৃতি হলো আল্লাহর বিধান, ক্ষমতা ও জ্ঞানের প্রকাশ।
আল্লাহ আমাদের একমাত্র উপাস্য। তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা করা হল শিরক।
মুমিনদের লক্ষণ হল আল্লাহর প্রতি গভীর প্রেম ও ভালোবাসা, যা তার কাজে কর্মে প্রকাশ পায়। কোন বিপদ বা আনন্দ উৎসব তাকে আল্লাহ প্রেম থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।
মুমিনরা বিশ্বাস করে চিরস্থায়ী কল্যাণ একমাত্র আল্লাহর হাতে।
আল্লাহ শাস্তি দানে অনেক কঠোর ।
কিয়ামতের দিন মূর্তিপুজারীরা যাদের অনুসরণ করে বা দেখে অন্যায় কাজ করেছিল তারা সেদিন আর পাত্তা দিবে না।
সেদিন তারা আল্লাহর শাস্তির ভয়াবহতা দেখে বুঝতে পারবে নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
আক্ষেপের আগুনে তারা পুড়ে মরলেও এ থেকে তাদের আর কোন দিন মুক্তি মিলবে না।