সূরা বাকারা। রুকু - ২৭। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা। রুুকু - ২৭
আয়াত ১১৭- ২২১।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
২১৭ নং আয়াত: সম্মানিত মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২১৭)পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে; বল, ‘উহাতে যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায়।’ কিন্তু আল্লাহর পথে বাধা দান করা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, মসজিদৃল হারামে বাঁধা দেওয়া এবং উহার বাসিন্দাকে উহা হইতে বহিস্কার করা আল্লাহর নিকট তদপেক্ষা অধিক অন্যায়; ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর অন্যায়। তাহারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাকিবে যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দীন হইকত ফিরাইয়া না দেয়, যদি তাহারা সক্ষম হয়। তোমাদের মধ্যে যে কেহ স্বীয় দীন হইতে ফিরিয়া যায় এবং কাফিররূপে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাহাদের কর্ম নিস্ফল হইয়া যায়। ইহারাই দোজখবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জাহেলিয়াতের যুগেও রজব, যিলক্কাদ, যিলহাজ্জ এবং মুহাররমিএই চারটি মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। তারা এই মাসগুলিকে সম্মানিত এবং পবিত্র মাস বলে মনে করত। ইসলামও এ মাসগুলোর সম্মান বজায় রাখে।
এই পবিত্র চার মাসে যুদ্ধ করা ভয়ানক অন্যায়। তবে আত্মরক্ষার জন্য করা যায়।
তার চাইতে বড় অন্যায় নীচের কাজগুলি করা:
আল্লাহর পথে বাঁধা দান করা।
আল্লাহকে অস্বীকার করা।
মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাঁধা দেয়া।
মুসলিমদের সেখান থেকে বিতাড়িত করা।
আল্লাহর কাছে বড় অন্যায়
ফেতনা-ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও উৎপীড়ন অনেক বড় অন্যায়।
হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ।
কাফেররা মুসলিমদের ধর্ম থেকে ফিরানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে সর্বক্ষণ যুদ্ধ বাধিয়ে রাখবে।
মুসলমানদের কাজকর্ম মূল্যহীন হয়ে যাবে :
যদি কেউ কাফেরদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে।
অবিশ্বসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
ইহকালে ও পরকালের কর্মফল নষ্ট হয়ে যাবে।
তাদের স্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
২১৮ নং আয়াত:সওয়াবের প্রতিশ্রুতি।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২১৮) যাহারা ঈমান আনে এবং যাহারা হিজরত করে এবং জিহাদ করে আল্লাহর পথে, তাহারাই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নিয়্যত অনুযায়ী আল্লাহ সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যারা ঈমান আনে অর্থ্যাৎ বিশ্বাসী
যারা হিজরত করে।
আল্লাহর পথে জিহাদ করে।
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশ্যা করে।
আল্লাহ ক্ষমা পরায়ণ ও পরম দয়ালূ।
২১৯ নং আয়াত: মদ ও জুয়া নিষিদ্ধকরণে প্রথম কর্মসূচী।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২১৯) লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু উহাদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।’ লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, কী তাহারা ব্যয় করিবে? বল, ‘যাহা উদ্বৃত্ত।’ এইভাবে আল্লাহ তাঁহার বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেন, যাহাতে তোমরা চিন্তা কর-
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রথম প্রশ্ন: মদ ও জুয়া সম্পর্কে?
উত্তর:
দুটোর মধ্যে যেমন আছে মহা পাপ তেমনি উপকারও আছে।
উপকারের থেকে পাপের পরিমাণ অধিক।
বি.দ্র: মদীনায় হিজরত করার পর কতিপয় সাহাবী মদ ও জুয়ার অকল্যাণগুলো প্রকটভাবে অনুধাবন করে এবং মহানবী (সঃ) কাছে জানতে চায়। এর উত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়। এই আয়াতটি মুসলিমদের মদ ও জুয়া থেকে দূরে রাখার প্রথম আয়াত। এই দুটোর মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও কিছুটা উপকার আছে কিন্তু তার থেকে অধিক পরিমাণে পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন : মদ খেয়ে বুদ্ধি-বিবেচনা লোপ পায়। ফলে উপকারিতার থেকে পাপর আধিক্য বেশী। বুদ্ধি এমন একটি গুণ যা মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
এই আয়াতে মদ পানের অনিষ্ট ও অকল্যাণকর দিক তুলে ধরা হয়েছে। মদপান ত্যাগ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সূরা আন-নিসারে ৪৩ নং আয়াতে মদপানের সময় সীমিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে ‘তোমরা নেশার অবস্থায় সালাত আদায় করো না। সূরা মায়েদার ৯০-৯১ নং আয়াতে মদকে অপবিত্র ও শয়তানী কর্ম সাব্যসত করে তা চিরতর হারাম ঝোষণা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তার কী ব্যয় করবে?
উত্তর:
যা তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ্যাৎ উদ্বৃত্ত অর্থ।
সাদাকার বেলায় নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাই ব্যয় করতে বলা হয়েছে। যেমন: নিজের সন্তানদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কিংবা ঋণ পরিশোধ না করে নফল সাদাকা করার নিয়ম নেই।
২২০ নং আয়াত: এতীমদের অধিকার সংরক্ষণ
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২২০) দুনিয়া ও আখিরাত সম্বন্ধে । লোকে তোমাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বল, ‘তাহাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম।’ তোমরা যদি তাহাদের সাথে একত্রে থাক তবে তাহারা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ জানেন কে হিতকারী এবং কে অনিষ্টকারী। আল্লাহ ইচ্ছা করিলে এ বিষয়ে তোমাদেরকে অবশ্যই কষ্টে ফেলিতে পারিতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এতিমদের জন্য সুব্যবস্থা করা।
তাদের সাথে একত্রে থাকা।
আল্লাহ জানেন কে এতীমদের কল্যাণকামী আর কে কল্যাণকামী নয়।
মহান আল্লাহ এতিমের প্রতি অকল্যাণকামীকে সতর্ক করে দিচ্ছেন।
িআল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী
২২১ নং আয়াত: কাফেরদের সাথে বিবাহ বন্ধন:
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২২১) ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক নারীকে তোমরা বিবাহ করিও না-মুশরিক নারী তোমাদের মুগ্ধ করিলেও, নিশ্চয়ই মুসলিম ক্রীতদাসী তাহা অপেক্ষা উত্তম। ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক পুরুষের সঙ্গে তোমরা বিবাহ দিও না- মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করিলেও, মুমিন ক্রীতদাস অপেক্ষা উত্তম। উহারা অগ্নির দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহ তোমাদেরকে নিহ অনুগ্রহে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন। তিনি মানুষের জন্য স্বীয় বিধান সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাহাতে তাহারা উহা হইতে শিক্ষা গ্রহণ করিতে পারে।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুশরিক নারী ঈমান না আনা পর্যন্ত বিয়ে করা যাবে না।
মুমিন ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম।
মুশরিক পুরুষকে ইমান আনলে তার সাথে মুমিন নারীর বিবাহ হতে পারে।
মুমিন ক্রীতদাস মুশরিক পুরুষ অপেক্ষা উত্তম।
মুশরিকরা আগুনের দিকে আহ্বান করে।
মহান আল্লাহ সব সময় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন।
অনুধাবন:
মানুষের মধ্যে ফিতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ।
মদ ও জুয়া আল্লাহর অপছন্দনীয় এবং শয়তানী কাজ। এ ধরণের কাজ পরিহার করা সর্বত্তেম। কারণ এতে যে ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা নয় সমাজেরও অনেক ক্ষতি হয়।
মানুষের উচিত তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি জনহিতকর কাজে দান করে দেয়া।
এতিমদের সম্পত্তি থেকে কখনো ব্যক্তিগত লাভ আশা করা উচিৎ নয়। এতিমদের মঙ্গলের দিকে সব সময় নজর রাখা উচিত। তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ।
মানুষের চারিত্রিক ও আত্মিক পবিত্রতা হচ্ছে সম্মানে চাবিকাঠি। মহান আল্লাহ তাদের কাছে নৈতিক চরিত্রের দৃঢ়তা ও সততা আশা করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং তাঁর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। প্রতারণা করে আল্লাহর কাছে পার পাওয়া যাবে ন।
‘বিবাহ বন্ধন’ মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পুরুষ ও নারী এই বন্ধনের মাধ্যমে নতুন পরিবার গঠন করে। এই দুইজনের নৈতিক মূল্যবোধ, চেতনা যদি দুরকম হয় তবে একসময় তাদের পরস্পরের প্রতি ভালবাসার ভিত্তি দুর্বল হতে বাধ্য।