সূরা বাকারা। রুকু ২২।নেক কাজের মূল নীতি এবং বিধানের বর্ণনা।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্রাহর নামে শুরু
সূরা বাকারা । রুকু ২২
আয়াত: ১৭৭ - ১৮২
প্রতিশোধ ও দান।
নেক কাজের মূল নীতি এবং বিধানের বর্ণনা।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
১৭৭ নং আয়াত: বিশ্বাস, কাজ ও নৈতিক চরিত্রের মূল নীতি।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭৭) পূণ্য তো কেবল এটাই নয় যে, তোমরা নিজেদের চেহারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে, বরং পুণ্য এই যে, লোকে আল্লাহর প্রতি, শেষ দিনের প্রতি, ফিরিশতাদের প্রতি, আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ও তাঁর নবীগণের প্রতি ঈমান আনবে আর আল্লাহর ভালবাসায় নিজ সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির ও সওয়ালকারীদেরকে দান করবে এবং দাস মুক্তিতে ব্যয় করবে আর সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, যখন কোন প্রতিশ্রুতি দিবে তা পূরণে অভ্যস্থ থাকবে এবং সংকটে -কষ্টে ও যুদ্ধকালে ধৈর্য-স্থৈর্যে অভ্যস্থ থাকবে। এরাই তারা যারা সত্যবাদী (নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত) এবং এরাই মুত্তাকী।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর ধর্ম শুধু কেবলা বা নামাজের দিকের মধ্যেই সীমিত নয়।
মহান আল্লাহ এই আয়াতে বিশ্বাসীদের ছয়টি মানদন্ড দিয়েছেন
আল্লাহ, আখিরাত, ফেরেশেতা, সব কিতাব, নবী ও রাসুলের উপর আন্তরিকতার সাথে ইমান আনে।
আল্লাহর প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন, মুসাফির , দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করবে।
সালাত কায়েম করবে।
জাকাত আদায় করবে।
অঙ্গীকার পূরণ করবে।
তিনটি বিশেষ অবস্থায় আল্লাহর উপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করতে বলা হয়েছে। শারিরীক কষ্ট ও যন্ত্রণা, অভাব-অনটন এবং যুদ্ধ বা এমন অবস্থা যখন মানুষ নিদারুণ আতংকে নিপতিত।
প্রশ্ন: কাদের দান করতে হবে?
নিকট আত্মীয়।
এতিম। অর্থ্যাৎ পিতৃ-মাতৃহীন শিশু এবং অসহায় ব্যক্তি যার কোন সহায়-সম্বল নেই।
মিসকীন। অভাবগ্রস্থ হওয়া সত্বেও কারো কাছে কোন সাহায্য প্রার্থনা করে না।
মুসাফির।
সাহায্যপ্রার্থী। আর্থিক প্রয়োজন ছাড়াও সমাজে বাস করতে গিয়ে আমরা এক অপরের উপর নির্ভরশীল। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
ক্রীতদাস মুক্তি। বর্তমান যুগে এ প্রথা নেই। কিন্তু বর্তমান কালে আমরা সমাজে দেখতে পাই মানুষ মানুষের উপর নির্যাতন করে। নির্যাতনের ধরণ পাল্টে গিয়েছে।
১৭৮ ও ১৭৯ নং আয়াত: নেক কাজের বিধান: কিসাস।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭৮) হে মুমিণগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হইয়াছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী, কিন্তু তাহার ভাইয়ের পক্ষ হইতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হইলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সঙ্গে তাহার দেয় আদায় বিধেয়। ইহা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ। ইহার পরও যে সীমালংঘন করে তাহার জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭৯) হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রহিয়াছে, যাহাতে তোমরা সাবধান হইতে পার।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বি. দ্র: ‘কিসাস’ শব্দের অর্থ সম পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ।
এ আয়াতে আদেশ করা হয়েছে , কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং হত্যাকারীর অপরাধ প্রমাণিত হয় তবে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশ কিসাসের দাবী করতে পারে।
সমতার ভিত্তিতে তিন ধরণের লোকের কথা বলা হয়েছে।
স্বাধীন ব্যক্তির পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তি।
ক্রীতদাসের পরিবর্তে ক্রীতদাস।
নারীর বদলে নারী।
’কিসাস’ প্রযোজ্য শুধুমাত্র বিবাদ বিসংবাদ, ঝগড়া-ঝাটির সময়।
ভুলক্রমে বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ব্যাপারে কিসাস প্রযোজ্য নয়।
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশদের অধিকার দেয়া হয়েছে তারা চাইলে ক্ষমা করে রক্তপণ হিসাবে অর্থ নিতে পারে। এ রূপ অবস্থায় তাদের কর্তব্য রক্তপণের অর্থ ন্যায়সঙ্গত সীমার মধ্যে রাখা।
কিসাসের ব্যাপারে সীমা লংঘন করা যাবে না। যেমন: ওয়ারিশগণ যদি রক্তপণ নিয়ে ক্ষমা করে থাকে তবে হত্যাকারীকে হত্যা করা জায়েজ হবে না।
যে করবে সে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির উপযুক্ত হবে।
’হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে এ উদ্দেশ্যে যে যারা বিবেচক এবং জ্ঞানী তারাই আল্লাহর এই বিধানের রহস্য এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সক্ষম।
কিসাসের মধ্যে আছে মহাজীবনের সাফল্য।
১৮০, ১৮১ ও ১৮২ নং আয়াত: নেক কাজের বিধান: ওছিয়ত।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৮০) তোমাদের মধ্যে কাহারও মৃত্যুকাল উপস্থিত হইলে সে যদি ধন-সম্পত্তি রাখিয়া যায় তবে ন্যায়ানুগ প্রথামত তাহার পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওসিয়ত করার বিধান তোমাদেরকে দেওয়া হইল। ইহা মুত্তাকীদের জন্য একটি কর্তব্য।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৮১) উহা শ্রবণ করিবার পর যদি কেহ উহার পরিবর্তন সাধন করে, তবে যাহারা পরিবর্তন করিবে অপরাধ তাহাদেরই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৮২) তবে যদি কেহ ওসিয়তকারীর পক্ষপাতিত্ব কিংবা অন্যায়ের আশংকা করে, অতঃপর সে তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দেয়, তবে তাহার কোন অপরাধ নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
—--------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------
প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার মৃত্যুকালে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পক্ষে ন্যায় সঙ্গতভাবে ওসিয়ত করে যেতে হবে।
স্পষ্ট করে দিতে হবে কে কতটুকু পাবে।
মুত্তাকীদের জন্য ওসিয়ত করা কর্তব্য।
যে সব লোকেরা মুমূর্ষু ব্যক্তির মুখ থেকে ওসিয়্যত শুনেছে তাদের পক্ষে ওসিয়্যত কম-বেশী করা জায়েয নয়।
তাদের কর্তব্য হচ্ছে ওসিয়্যতকারী যা বলেছে তাই করা।
তবে ওসিয়তকারী যদি ন্যায়বিচার না করে তবে সে মরার আগে তাকে বুঝিয়ে ওসিয়্যত পরিবর্তন করা জায়েয।
অনুধাবন:
পাশ্চাত্য দেশ সমূহে কিবলা পূর্ব দিক। আমাদের পশ্চিম দিক। আল্লাহ বলছেন পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোতে পূণ্য নেই। অর্থ্যাৎ শুধু আনুষ্ঠানিকতার উপর ধর্ম নেই। এটা ঠিক যে কতগুলো নিয়ম মেনে দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করলে ধর্মের অন্তরে প্রবেশ করা যায়। আল্লাহ যে নৈতিক মানদন্ড দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মেনে চলতে হবে।
আল্লাহকে শুধু মুখে বিশ্বাস করলে হবে না। এই বিশ্বাস মনের এমন এক অবস্থা জীবনের সর্ববস্থায় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল থাকবে এবং সুখে-দুঃখে, বিপদের সময় আল্লাহর উপস্থিতি অন্তরে অনুভব করতে পারবে।
ব্যক্তিগতভাবে দান করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সমষ্টিগতভাবে যে কল্যাণমুখী কর্মসূচী হাতে নেয়া হয় তাতেও অংশগ্রহণ করতে হবে।
মানুষ যখন মারা যায় তখন সে কোন ধন-সম্পদ তার সাথে নিয়ে যেতে পারে না। ফেলে যাওয়া অর্থ-সম্পদ কিভাবে ব্যয় করা হবে সে সম্পর্কে কুরআনে সুনির্দিষ্ট ্ন্ন আছে। ভাবনা হচ্ছে ওসিয়্যত।
ওসিয়্যতের প্রতি অবশ্যেই সম্মান দেখাতে হবে।