সূরা বাকারা । রুকু ২১। হালাল ও হারাম এবং কুরআনের নীতিমালা।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু
সূরা বাকারা। রুকু ২১।
আয়াত : ১৬৮- ১৭৬।
হালাল ও হারাম এবং কুরআনের নীতিমালা।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
১৬৮ নং আয়াত: হালাল খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------(১৬৮) হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যাহা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবসতু রহিয়াছে তাহা হইতে তোমরা আহার কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসণে করিও না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে সমগ্র বিশ্ববাসীকে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য এ আয়াত প্রযোজ্য।
মহান আল্লাহ ‘হালালান ত্বইয়্যেবা’ বা বৈধ প্বত্র খাবার খেতে আদেশ করেছেন।
যে খাবার অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে তা খাওয়া বৈধ নয়।
’খুতুয়াতুশ শয়তান’ বা শয়তানের পথে পদচারণা করে হারমকে হালাল অথবা হালালকে হারম মানতে নিষেধ করা হয়েছে।
কারণ শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
১৬৯ নং আয়াত: শয়তানের শত্রুতার বিবরণ।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬৯) সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যাহা জান না এমন সব বিষয় বলার নির্দেশ দেয়।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শয়তান মন্দ ও অশ্লীল কাজে উৎসাহিত করে।
মানুষের মনে আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দেয়।
শয়তান জানে যে কোন একজন ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেনা তবু তাকে আল্লাহ সম্পর্কে বলতে বলে।
অর্থ্যাৎ অজ্ঞ ব্যক্তিকে নিজেকে জ্ঞানী বলে ভাবতে অনুপ্রাণিত করে যাতে সে বিদাতমূলক কাজ করে।
১৭০ নং আয়াত: পিতৃপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭৯) যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা তোমরা অনুসরণ কর, তাহারা বলে, ‘না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহার অনুসরণ করিব।” এমন কি, তাহাদের পিতৃপুরুষগণ যদিও কিছুই বুঝিত না এবং তাহারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না -তৎসত্ত্বেও।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বিদআতকারীদের আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ কিতাবে অনুসরণ করতে বলে তারা অস্বীকার করে।
তারা পিতৃপুরুষ হতে প্রাপ্ত জ্ঞানের অন্ধ অনুসারী।
তারা জানে তাদের পিতৃ পুরুষরা জানত না।
তাছাড়া তারা সৎপথে পরিচালিত ছিল না।
তারপরেও তারা পূর্বসূরীদের অন্ধ অনুসরণ করতে চায়।
১৭১ নং আয়াত: নির্বোধ বা অজ্ঞ ব্যক্তি।
—---------------------------------------------------------------------------
(১৭১) যাহারা কুফরী করে তাহাদের উপমা: যেমন কোন ব্যক্তি এমন কিছুকে ডাকে যাহা হাঁক-ডাক ছাড়া আর কিছুই শ্রবণ করে না-বধির, মূক, অন্ধ, সুতরাং তাহারা বুঝিবে না।
—---------------------------------------------------------------------------
কুফরকারী ব্যক্তিদের পশুর সাথে তুলনা করা হয়েছে যারা না বুঝেই রাখালকে অনুসরণ করে।
তারা বধির -কারণ সত্যের ডাক শুনতে পায়না।
তারা বোবা -কারণ তারা সত্য কথা বলে না।
তারা অন্ধ-কারণ তারা সত্য দেখে না।
সামগ্রিকভাবে তারা জ্ঞান শূণ্য্। তাই তারা সত্যের দাওয়াত বুঝতে পারে না।
১৭২ নং আয়াত: আল্লাহর নেয়ামতেরে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
—---------------------------------------------------------------------------
(১৭২) হে মুমিণগণ! তোমাদেরকে আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়াছি তাহা হইতে আহার কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা শুধু তাাঁহারই ‘ইবাদত কর।
—---------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ যে সব খাবার হালাল বলে ঘোষণা করেছেন তা খেতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলেছেন।
একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করতে বলেছেন।
১৭৩ নং আয়াত: হারাম খাবার ।
—---------------------------------------------------------------------------
(১৭৩) নিশ্চয় আল্লাহ মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর-মাংস এবং যাহার উপর আল্লঅহর নাম ব্যতীত অন্যের নাম উচ্চারিত হইয়াছে তাহা তোমাদের জন্য হারাম করিয়াছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ নাফরমান কিংবা সীমালংনকারী নয় তাহার কোন পাপ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
—---------------------------------------------------------------------------
এ আয়াতটি হারাম সম্পর্কে ভুল অপনোদন করেছে।
চারটি হারামকৃত জিনিসের উল্লেখ করেছেন।
মৃত জন্তু,
রক্ত,
শূকরের মাংস,
জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করা।
১৭৪ নং আয়াত:মূর্খ ব্যক্তি ও জাহান্নামের শাস্তি ।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭৪) আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ কারয়াছেন যাহরা তাহা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তাহারা নিজেদের জঠরে অগ্নি ব্যতীত আর কিছুই পুরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাহাদের সঙ্গে কথা বলিবেন না এবং তাহাদেরকে পবিত্র করিবেন না। তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে এমন ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে গোপন রাখ্
সামান্য বৈষয়িক স্বার্থের লোভে আল্লাহর বাণী বিক্রী করে অর্থনৈতিক ফায়দা গ্রহণ করে।
এই বিনিময় মূল্যকে তুলনা করা হয়েছে আগুনের ফুলকির সাথে।
তারা এই আগুনের ফুলকি দিয়ে পেট ভর্তি করে।
কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না অর্থ্যাৎ কোন রকম করুণা করবেন না।
বিশ্বাসী পাপীরা যেমন তাদের নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করার পর পবিত্র হয়ে যায়, এ ধরণের ব্যক্তিরা এরকম পবিত্র হত পারবেনা।
তারা শাস্তি পেতেই থাকবে।
১৭৫ নং আয়াত: অলাভজনক পণ্য বেচা-কেনা।
—---------------------------------------------------------------------------
(১৭৫) তাহারাই সৎপথের বিনিময়ে ভ্রান্ত পথ এবং ক্ষমার পরিবের্তে শাস্তি ক্রয় করিয়াছে; আগুন সহ্য করিতে তাহারা কতই না ধৈর্যশীল।
—---------------------------------------------------------------------------
যারা সত্য গোপন করে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন।
আল্লাহ উপমা দিয়েছেন এভাবে যে এরা এমন বেচাকেনা করে যে সৎপথের বদলে ভ্রান্ত পথ গ্রহণ করে।
ক্ষমার মূল্য দিয়ে কিনছে শাস্তিকে।
সোজা কথায় তারা জাহান্নামের পাথেয় সংগ্রহ করে।
আল্লাহ বিদ্রূপ করে বলছেন, তারা দোজখের আগুনে বসে ধৈর্যের পরকাষ্ঠা দেখাবে।
১৭৬ নং আয়াত: সত্যবাহী গ্রন্থ।
—---------------------------------------------------------------------------
(১৭৬) ইহা এইহেতু যে, আল্লাহ সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন এবং যাহারা কিতাব সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করিয়াছে, নিশ্চয় তাহারা দুস্তর মতভেদে রহিয়াছে।
—---------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ সত্যবাদী গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন।
এর মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কিতাব নিয়ে মতভেদ করেছেন।
এর মাধ্যমে কেউ হয়েছে বিশ্বাসী আবার কেউ হয়েছে অবিশ্বাসী।
যারা সত্যচ্যুত তাদের ভিতর মতভেদ অন্তহীন।
অনুধাবন:
পবিত্র কুরআনে হালাল খাবারের উপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন এ ব্যাপারে যেমন পরামর্শ দিয়েছে এবং সে সাথে তা মেনে চলতে আদেশ দিয়েছেন।
আমাদের একটি সাধারণ ধারণা আল্লাহকে শুধু দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে স্মরণ করতে হবে। এর সাথে আল্লাহ খাওয়ার ব্যাপারেও আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলতে বলেছেন। কারণ আল্লাহ বৈধ ও পবিত্র খাদ্য বস্তিু আহার করতে বলেছেন।
মহান আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নেয়ামত দিয়েছেন। আমাদের উচিত এ সব নেয়ামতের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। মানুষ সাধারণত তার যা নেই তা নিয়ে আফসোস করতে থাকে। কিন্তু তা না করে আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন তা ভালো পন্থায় ব্যবহার করি তবে সেটাই হবে আল্লাহর কাছে প্রকৃত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
মহান আল্লাহ কোনটি হালাল আর কোনটি হারাম তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। আমাদের প্রয়োজন পূরণে সব সময় হালাল পন্থা অনুরেণ করতে হবে। হারামকৃত বিষয় সমূহ বর্জন করতে হবে।
সব সময় মনে রাখতে হবে হালাল খাবার খেতে হবে। অবৈধ পন্থায় টাকা উপার্জন করে সে টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়াও হারাম।