সূরা বাকারা। রুকু - ১৭। মধ্যপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ জাতি।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা -২।
রুকু -১৭। আয়াত ১৪২ - ১৪৭।
মধ্যপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ জাতি।
আযাত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়।
১৪২ নং আয়াত:কিবলা পরিবর্তন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------(১৪২) নির্বোধ লোকেরা বলিবে যে, তাহারা এ যাবত যে ক্বিবলা অনুসরণ করিয়া আসিতেছিল উহা হইতে কিসে তাহাদিগকে ফিরাইয় দিল? বল, 'পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাহাকে ইচ্ছা সরলপথে পরিচালিত করেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- নির্বোধ লোকেরা সাধারণত তাদের পুরানো অভ্যাসের দিকে ঝুঁকে থাকে।
- আল্লাহ পাকের নির্দেশে প্রত্য্যেক ইবাদতে মুমিণদের মুখ এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর দিকে থাকে।
- পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই মালিকাধীন ।
- আল্লাহর নির্দেশিত সরল পথে চলার উপরে রয়েছে মানুষের মুক্তি।
- আল্লাহ যােকে ইচ্ছা তাকে সোজা সরণ পথে পরিচালিত করেন।
বি. দ্র. : নির্বোধ বা ‘সুফাহা’ বলতে বোঝায় তাদের যারা পূর্ব পুরুষদের এবং ঐতিহ্যের অন্ধ অনুসরণ করে, প্রবৃত্তির তাড়নায় পরিচালিত হয় কিংবা অনুসন্ধিৎসাহীনতা ও চিন্তাহীনতায় ভোগে। এই আয়াতে ইংগীত করা হয়েছে মূর্তি পূজারী, মুশরিক এবং ইহুদীদের একটি অংশকে যারা বিভিন্ন অযৌক্তিক যুক্তি দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে পেরেশান করতে সচেষ্ট থাকত।
’কিবলা’ র শাব্দিক অর্থ মুখ করার দিক। কোন কিছুর সম্মুখে স্থান নেয়া।
’কিবলা’ র শাব্দিক অর্থ মুখ করার দিক। কোন কিছুর সম্মুখে স্থান নেয়া।
১৪৩ নং আয়াত: মধ্যপন্থী ও ভারসাম্য পূর্ণ জাতি।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------(১৪৩) এইভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্টিত করিয়াছি, যাহাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হইবে। তুমি এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করিতেছিলে উহাকে আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যাহাতে জানিতে পারি কে রাসুলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরিয়া যায়। আল্লাহ যাহাদের সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন তাহারা ব্যতীত অপরের নিকট ইহা নিশ্চয়ই কঠিন। আল্লাহ এইরূপ নহেন যে, তোমাদের ইমানকে ব্যর্থ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- আল্লাহ মুসলমানদের অন্যান্য উম্মতদের বিপরীতে মধ্য পথ অবলম্বী এবং ভারসাম্য পূর্ণ জাতি হিসাবে বানিয়েছেন।
- এই আয়াতে আল্লাহ মুসলিমদের সব ধরণের চরম পন্থা থেকে মুক্ত মধ্যপন্থী জাতি হিসাবে উল্লেখ করেছে।
- মুসলিম জাতিকে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়।
- তাদের বিশেষত্ব হচ্ছে তারা:
(খ) এ বিধানাবলী কিয়ামত পর্যন্ত মানবতার সঠিক পথ
নির্দেশ করে।
(গ) কিয়ামতের দিন মধ্যপন্থী উম্মতদের অন্যান্য নবী-রাসুলদের সাক্ষী হিসাবে পেশ করা হবে।
- মুসলিমদের জন্য সাক্ষী দিবেন রাসুল (সঃ)।
- কিবলা পরিবর্তনের উদ্দেশ্য কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ মানে।
- সত্তাগতভাবে কোন বস্তুর কোন মর্যাদা বা পবিত্রতা নেই। প্রকুত মর্যাদা আল্লাহর হুকুমের।
- নতুন কিবলাকে গ্রহণ করা প্রথম দিকে খুব কঠিন ছিল।
- যাদের ইমানে শক্তি ছিল তারা বিষয়টিকে বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়।
- মানুষের প্রতি আল্লাহ অতি দয়ালু, মেহেরবান।
১৪৪ নং আয়াত: কিবলা পরিবর্তন।
------------------------------------------------------------------------------(১৪৪) আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ্য করি । সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যাহা তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাও এবং যাহাদেরকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, উহা তাাদের প্রতিপালকের প্রেরিত সত্য । তাহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ অনবহিত নহেন।
------------------------------------------------------------------------------
বি.দ্র: এই আয়াতে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মনের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি কিবলা পরিবর্তনের অপেক্ষায় ছিলেন। ইহদীরা বিদ্রূপ করত মুসলমানদের স্বতন্ত্র কিবলা নেই। তাছাড়া বাইতুল্লাহ বাইতুল মুকাদ্দাস অপেক্ষা বেশী প্রাচীন। এর সাথে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর স্মৃতি জড়িত। হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে অবতরণের পূর্বেই ফেরেশতারা কাবা গৃহের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিল। তাই তিনি মনে মনে চাইতেন বায়তুল্লাহকে কিবলা বানানো হোক। যেদিন এই ওহী নাযিল হয় সেদিন হঠাৎ জোহরের সময় আল্লাহর রাসুলের উপর এই নির্দেশ জারি হয়। রসুল (সঃ) তখন বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মুখ ফিরিয়ে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে সালাত পড়েন। এখানে উল্লেখ্য যে পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থে এ কথা উল্লেখ আছে ইসলামের নবী দুই কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পদবেন।
- মহান আল্লাহ এই আয়াতে রাসুল (সঃ) এর আকাশের দিকে বারবার তাকানোর কথা উল্লেখ করেছেন।
- মহান আল্লাহ নিশ্চয়তা দেন রাসুল (সঃ) স্থানকে কেবলা করতে চান তা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন।
- মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত পড়তে বলেন।
- পূবর্বতী ঐশী কিতাবধারীরা এ ব্যাপারটি জানে। কাণে তাদের কিতাবে এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে।
- পূর্বর্তী কিতাবধারীরা যা করেছে আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।
১৪৫ নং আয়াত: হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সান্তনা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------(১৪৫) যাহাদেরকে কিতাব দেওয় হইয়াছে তুমি যদি তাহাদের নিকট সমস্ত দলীল পেশ কর, তবুও তাহারা তোমার কিবলার অনুসরণ করিবে না; এবং তুমিও তাহাদের কিবলার অনুসারী নও, এবং তাহারাও পরস্পরের কিবলার অনুসারী নয়। তোমার নিকট জ্ঞান আসিবার পর তুমি যদি তাহাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর, নিশ্চয়ই তখন তুমি জালিমদের অর্ন্তভূক্ত হইবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- আহলে কিতাবীরা রাসুল (সঃ) এর কিবলা গ্রহণ না করলে দুঃখিত হতে নিষেধ করেছেন।
- কারণ তাদের যতই যুক্তি দেখানো হোক না কেন তারা মানবে না।
- রাসুল (সঃ) তাদের কিবলার অনুসারী নয় তেমনি তারাও রোসুল (সঃ) এর কিবলার অনুসারী নয়।
- দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করে দিন আপনি আপনার অবস্থান থেকে মোটেই পিছে হটবেন না।
- রাসুল (সঃ) যদি সঠিক কিবলার অনুসরণ না করে আহলে কিতাবীদের অনুসসরণ করেন তবে তিনি জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হবেন।
১৪৬ নং আয়াত: সত্য গোপন।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------(১৪৬) আমি যাহাদেরকে কিতাব দিয়াছি তাহারা তাহাকে সেইরূপ জানে যেইরূপ তাহারা নিজেদের সন্তানগণকে চিনে এবং তাহাদের একদল জানিয়া-শুনিয়া সত্য গোপন করিয়া থাকে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৪৭) সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত। সুতরাং তুমি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে শেষ নবীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।
- তারা শেষ নবী হযরত মুহাম্দ (সঃ)কে নিজ সন্তানদের যেভাবে চিনে সেভাবেই চিনে।
- তারা জেনেও সত্যকেেোপন করেছে।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নাজিল হয়েছে তাই একমাত্র সত্য। অধিকাংশ মানুষ এর যতই বিরোধীতা করুক ঐশী নির্দেশের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ করা ঠিক নয়।
অনুধাবন:
- পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ সবই আল্লাহর সৃষ্টি। তবে এক দিক নির্ধারণ করার কারণ তা না হলে ইবাদতকারী যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে মুখ করত।
- সমষ্টিগত ইবাদতের (সালাত, হজ্জ্ব) সময় বিশৃংখলার সৃষ্টি হত।
- সকল দিক, সকল স্থান আল্লাহর অধিকারাধীণ। তিনি তাঁর প্রজ্ঞা ও অনুযায়ী কাবা ঘরকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে এটি সত্তাগতভাবে পবিত্র ও পূজনীয়। আসল বিষয় হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ ও নির্দেশ মানার আনুগত্য।
- তাছাড়া কিবলা পরিবর্তনে একদিকে আছে যেমন স্বাধীনতার রহস্য, তেমনি আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের নির্দশন।
- মহান আল্লাহ কাবা গৃহের মত ঐতিহ্যবাহী স্থানকে কিবলার জন্য মনোনীত করে দিয়ে আলাদা উম্মত হিসাবে সম্মানিত করেছেন।
- ইসলাম হলো ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যপন্থী ধর্ম। যদি মুসলমানরা আল্লাহর নির্দেশিথ সঠিক পথে চলে তাহলে তারা অন্যান্য জাতির আদর্শ ও তাদের জন্য সাক্ষী হতে পারে।
- কোন কিছু নিয়ে একগুঁয়েমী ও বিদ্বেষ সত্য অনুসন্ধানের বিরোধী। আর তাই ইসলাম ধর্ম একগুঁয়েমী এবং দাম্ভিক মনোভাবের বিরোধী।