সূরা বাকারা । রুকু - ১৬। ইব্রাহীমের ধর্ম ।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা । রুকু ১৬
আয়াত ১৩০- ১৪১
ইব্রাহীমের ধর্ম ।
মূল বিষয়: ইব্রাহীম (আঃ) এর ধর্ম বর্জনকারীর ভুল এবং হযরত ইব্রাহীম ও ইয়াকুব (আঃ) এর নিজ সন্তানদের আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং শোকরগোজারীর নির্দেশ।
আয়াত হিসেবে আলোচিত বিষয়:
১৩০ ও ১৩১ নং আয়াত : ইব্রাহীমের ধর্ম বর্জনকারীর ভ্রান্তি।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩০) যে নিজেকে নির্বোধ করিয়াছে সে ব্যতীত ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ হইতে আর কে বিমুখ হইবে। পৃথিবীতে তাহাকে আমি মনোনীত করিয়াছি; আর আখিরাতেও সে অবশ্যই সত্কর্মপরায়ণদেগণের অন্যতম।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩১) তাহার প্রতিপালক যখন তাহাকে বলিয়াছিলেন, 'আত্মসমর্পণ কর', সে বলিয়াছিল, 'জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করিলাম।'
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে রিসালত দিয়াছেন।
ইব্রাহীম (আঃ) জীবন পরিচালনার যে পথ দেখিয়েছেন নির্বোধরা তা অনুসরণ করে না।
যার বোধ শক্তি আছে সেই ইব্রাহীম (আঃ) এর এই ধর্ম অনুসরণ করবে।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে আল্লাহ নিজে পছন্দ করেছেন মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য।
তিনি আখেরাতে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত হবেন।
মানুষ তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ অনুসরণ করলে আল্লাহতায়ালার অনুগত হয়ে থাকবে ।
আল্লাহ যখন আনুগত্যের যে আদেশিই দেন হযরত ইব্রহীম (আঃ) সাথে সাথে তা স্বীকার করে নেন ও পালন করেন।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর পথ থেকে দূরে থাকা বোকামী ও অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না।
১৩২ নং আয়াত: হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর অছিয়ত।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩২) এবং ইব্রাহীম ও ইয়া'কুব এই সম্বন্ধে তাহাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়া বলিয়াছিলেন, 'হে পুত্রগণ! আল্লাহই তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে মনোনীত করিয়াছেন। সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হইয়া তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ করিও না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইব্রাহীম ও ইয়াকুব (আঃ) সত্যের প্রতি আনুগত্য থাকার আদেশ দিয়াছেন।
কারণ আল্লাহ এই ধর্মকে তাদের জন্য মনোনীত করেছেন।
মুসলমান না হয়ে যেন মৃত্যু বরণ না করে।
১৩৩ নং আয়াত: সন্তানদের আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের তাগিদ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইয়া'কুবের নিকট যখন মৃত্যু আসিয়াছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে যখন পুত্রগণকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, 'আমার পরে তোমরা কিসের 'ইবাদত করিবে? তাহারা তখন বলিয়াছিল,'আমরা আপনার ইলাহ-এর এবং আপনার পিতৃপুরুষ আব্রাহীম, ইসমাঈলও ইসহাকের ইলাহ-এরই 'ইবাদত করিব। তিনি একমাত্র ইলাহ এবং আমরা তাঁহার নিকট আত্মসমর্পণকারী।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইহুদীদের দাবী ছিল আগে যে অছিয়তের কথা বলা হয়েছে তা ইহদী ধর্ম । এ আয়াতে তা খন্ডন করা হয়েছে।
তাঁর সন্তানেরা কাি দিয়েছিল::
আমরা এক আল্লাহর ইবাদত করব।
তিনি একমাত্র মাবুদ।
আমার বাপ-দাদা বব্রিাহীম, ঈসমাঈল ও ইসহাকের মাবুদ।
আমরা একমাত্র তারই অনুগত থাকব।
১৩৪ নং আয়াত: মানুষের কৃতকর্ম তার নিজেরই।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩৪) সেই ছিল এক উম্মত. তাহা অতীত হইয়ছে। তাহারা যাহা অর্জন করিয়াছে তাহা তাহাদের। তোমরা যাহা অর্জন কর তাহা তোমাদের।তাহারা যাহা করিত সে সম্বন্ধেতোমাদের কোন প্রশ্ন করা হইবে না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইহুদীদের ধারণা ছিল পূর্ব পুরুষরা যা অর্জন করেছে সেটা তাদের থাকবে।
মহান আল্লাহ পরিষ্কার করে জানিয়ে দিচ্ছেন তাদের কৃতকর্ম তাদের কাজে আসবে আর বংশধরদের কৃতকর্ম বংশধরদের কাজে আসবে।
বংশধরদের কাছে পূর্বসূরীদের কৃতকর্ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
[মনে রাখতে হবে আকীদা ও আমলে পার্থক্য থাকলে বংশগত সম্পর্ক ও ভালবাসা থাকলেও কোন লাভ হবে না। ]]
১৩৫ নং আয়াত:: ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের মধ্যে দ্বন্দ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩৫) তাহারা বলে, ইহুদী বা খ্রীষ্টান হও, ঠিক পথ পাইবে।' বল, 'বরং একনিষ্ঠ হইয়া আমরা ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করিব এবং সে মুশরিকদের অন্তভূর্ক্ত ছিল না।
------------------—--------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইহুদীরা নিজেদেরকে সঠিক পথের অনুসারী এবং খ্রীষ্টানদের বিভ্রান্ত মনে করে। আবার খ্রীষ্টানরা ইহদীদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করে।
তারা মনে করে তাদের ধর্ম পথ অনুসরণ করলে সৎপথ পাবে বলে আহ্বান করে ।
মহান আল্লাহ নবীজিকে উত্তর দিতে আদেশ দিলেন ইহুদী বা খ্রীষ্টানরা কেউই ইব্রাহীমের ধর্মে নেই ।
ইব্রাহীম (আঃ) কখনই অংশীবাদীদের দলে ছিলেন না।
আমরা ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করব।
১৩৬ নং আয়াত: হযরত ইব্রহীম (আঃ) এর ধর্মাদর্শ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩৬) তোমরা বল, 'আমরা আল্লাহতে ঈমান রাখি, এবং যাহা আমাদের প্রতি এবং ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া'কুব ও তাঁহার বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে; এবং যাহা তাহাদের প্রতিপপালকের নিকট হইতে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে দেওয়া হইয়াছে; আমরা তাহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁহারই নিকট আত্মসমর্পণকারী ।'
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ ইহুদী, খ্রীষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের বলছেন:
- আমরা আল্লাহতে বিশ্বাসী।
আমরা আরো বিশ্বাসী ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা নবী ছিলেন তাদের প্রতি অবতীর্ণ ঐশী বিধানের প্রতি।
হযরত মূসা (আঃ), ঈসা (আঃ) ও অন্যান্য নবীকে প্রদত্ত বিধানের প্রতি।
আল্লাহর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন রকম বিভাজন করি না।
একমাত্র আল্লাহরই কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। ।
১৩৭ নং আয়াত: পুরানো বিষয়বস্তুর দৃষ্টান্ত।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩৭) তোমরা যাহাতে ইমান আনয়ন করিয়াছ তাহারা যদি সেইরূপ ইমান আনয়ন করে তবে নিশ্চয় তাহারা হিদায়াত পাইবে। আর যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া নেয়, তবে তাহারা নিশ্চয়ই বিরুদ্ধভাবাপন্ন এবং তাহাদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুসলমানদের ইমানের মত ও পথ অবলম্বন করলে ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা সঠিক পথ নির্দেশনা পাবে।
তারা যদি তা না করে তবে বুঝা যায় তারা তোমাদের বিরুদ্ধাচারণ করবে।
তাদের বিরুদ্ধাচারণের মোকাবেলায় আল্লাহই মুসলমানদের জন্য যথেষ্ট।
মুসলমানদের সম্পর্কে তাদের শত্রুরা যে পরিকল্পনা করছেন মহান আল্লাহ তার সব কিছু অবগত আছেন।
১৩৮ নং আয়াত: আল্লাহর রং।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩৮) আমরা গ্রহণ করিলাম আল্লাহর রঙ, রঙে আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিক সুন্দর? এবং আমরা তাঁহারই 'ইবাদতকারী।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ হচ্ছেন সমগ্র বিশ্ব জগতের রঙ দানকারী শিল্পী।
মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি মানুষকে পবিত্র স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার ইচ্ছামত রঙ ব্যবহার করছে।
মুসলমানদেরে আহ্বান করা হচ্ছে বলতে যে তারা আল্লাহর রং বা খাঁটি তাওহীদ অবলম্বন করেছে।
এই রং সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। আমরা শুধু আল্লাহর এবাদত করব।
১৩৯ ও ১৪০ নং আয়াত: আহলে কিতাবীদের দাবী খন্ডন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩৯) বল, 'আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা কি আমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হইতে চাও- যখন তিনি আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; এবং আমরা তাঁহার প্রতি একনিষ্ঠ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৪০) তোমরা কি বল, 'ইব্রাহীম, ইসমাঈল , ইসহাক, ইয়াকূব ও তাহার বংশধরগণ অবশ্যই ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান ছিল?' বল, 'তোমরা কি বেশী জান, না আল্লাহ?' আল্লাহর নিকট হইতে তাহার কাছে যে প্রশাণ আছে তাহা যে গোপন করে তাহার অপেক্ষা অধিকতর জালিম আর কে হইতে পারে? তোমরা যাহা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে অনবহিত নহেন।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ বলছেন তিনি যেমন মুসলমানদের প্রতিপালক তেমনি কাফেরদের প্রতিপালক।
প্রত্যেকে যার যার কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। আল্লাহ সবার থেকে বেশী জানেন।
একজন নবী সব সময় তাওহীদের সঠিক শিক্ষা দিয়েছেন।
বর্তমান ইহুদি-নাসারাদের সাথে পূণ্যাত্মা নবীগণের কোন সম্পর্ক নেই। মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবেই এ সত্য সুস্পষ্টভাবে লিখে দিয়েছেন।
তারা সত্যের বিকৃতি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
১৪১ নং আযাত: ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ভিত্তিহীন দাবীর জবাব।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৪১) সেই ছিল এক উম্মত, তাহা অতীত হইয়াছে। তাহারা যাহা অর্জন করিয়াছে তাহা তাহাদের। তোমরা যাহা অর্জন কর তাহা তোমাদের। তাহারা যাহা করিত সে সম্বন্ধে তোমাদের কোন প্রশ্ন করা হইবে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন করা হচ্ছে কেন তারা তাদের ইতিহাসকে ইব্রাহীম (আঃ)এর যুগ পর্যন্ত টেনে নিচ্ছে।
তারা যা অর্জন করেছে সেটা তাদের।
যার যার কৃতকর্মের জন্য তাকেই জবাব দিতে হবে।
কাউকে আরেকজনের কৃতকর্মের জন্য প্রশ্ন করা হবে না।
অনুধাবন:
- নির্বোধ সেই ব্যক্তি যে জ্ঞান-বুদ্ধি থাকা সত্বেও বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়।
একজন মানুষকে শুধু আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাহলেই ইহকালে ও পরকালে সফলতা পাওয়া যাবে।
একজন ভাল পিতা শুধু সন্তানের বৈষয়িক স্বার্থের কথা চিন্তা করেন না পরকালের জীবনের কথাও চিন্তা করেন। তাই মৃত্যুর সময় সন্তানকে আল্লাহর একাত্ববাদ এবং ইবাদতের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।
সন্তানের জন্য দোয়া করার সময় শুধু বৈষয়িক দিকের কথা ভাবলে হবে না, ইহকাল ও পরকালে যাতে তারা সৌভাগ্যের অধিকারী হয় তার জন্য দোয়া করতে হবে।
প্রত্যেক মানুষ তাঁর নিজের কাজের জন্য দায়ী থাকবে। পূর্ব পুরুষদের ভালো কাজের জন্য ক্ষমা লাভ করবে না। কিয়ামতের দিন কোন ধরণের সম্পর্ক বা সুপারিশ তরে কাজে আসবে না।
ইহুদী বা খ্রীষ্টান হওয়া নিয়ে কথা নয়। তৌহিদ ও একাত্ববাদের অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহর নবী-রাসুলরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের মত , যাারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষা দানের দায়িত্ব পেয়েছেন। মানুষের অগ্রগতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মহান আল্লাহ তাঁর গ্রন্থসমূহ এবং বিধি-বিধান নাযিল করেছেন যাতে সুপথ প্রদর্শন করা যায়।
অন্তরে বিশ্বাসের পাশাপাশি কাজেও আমাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিতে হবে। একদিকে মৌখিক ভাবে ইমানের কথা বলা আর কাজে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা ঠিক নয়।
আল্লাহ বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবার কথা শোনেন এবং তাদের মনের অবস্থা জানেন। তিনি সর্বজ্ঞ বলে জানেন কে কি প্রতিফল পাবে।