সূরা বাকারা। রুকু ১৫।হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মর্যাদা।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সূরা বাকারা। রুকু ১৫
আয়াত ১২২- ১২৯
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মর্যাদা।
মূল বিষয়: বনী ঈসরাঈলীদের সম্বোধন করে তাদেরকে আল্লাহ যে নেয়ামত দিয়েছেন ও তার বদলে তাদের অবাধ্যতা স্মরণ করিয়ে দেয়া। এ রুকু থেকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বৃত্তান্ত শুরু হয়। কাবাঘরকে মানুষের সম্মিলন স্থান ও শান্তির আলয় ঘোষণা। ইব্রাহীম (আঃ) রসুল পাঠানোর জন্য বিশেষ দোয়া।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়।
১২২ নং আয়াত: ইহুদীদের পূর্ব কথা স্মরণ করান।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২২) হে ঈসরাঈল-সন্তানগণ! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যদ্দারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করিয়াছি এবং তোমাদেরকে বিশ্বে সকলের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ বনী-ইসরাঈলীদের সেই অনুগ্রহকে স্মরণ করতে বলেছেন যার দ্বারা তিনি তাদের অনুগৃহীত করেছেন।
আরো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে বিশ্ব বাসীর উপর তাদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছিল।
১২৩ নং আয়াত: কিয়ামতের দিনের বৈশিষ্ট্য ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৩) এবং তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেহ কাহারও কোন উপকারে আসিবে না, কাহারও নিকট হইতে কোন বিনিময় গৃহীত হইবে না এবং কোন সুপারিশ কাহারও পক্ষে লাভজনক হইবে না এবং তাহারা সাহায্য প্রাপ্তও হইবে না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কিয়ামত দিবসকে আল্লাহ ভয় করতে বলেছেন।
কারণ সেদিন কেউ কারো কোন কাজে বা উপকারে আসবে না।
কারো নিকট হতে কোন সুপারিশ ও বিনিময় গৃহীত হবে না।
কেউ সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।
১২৪ নং আয়াত: হযরত ইব্রাহীম (আঃ)
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৪) এবং স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীমকে তাহার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করিয়াছিলেন এবং সেইগুলি সে পূর্ণ করিয়াছিল, আল্লাহ বলিলেন, ‘আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করিতেছি।’ সে বলিল, ‘আমার বংশধরগণের মধ্য হইতেও?’ আল্লাহ বলিলেন, ‘আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের প্রতি প্রয়োজ্য নহে।’
—-------------------------------------------------------------------------- -----------------------------------------------
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ঈমান মহান আল্লাহ কিছু কথা (কালিমাত’ )দ্বারা পরীক্ষা করেন।
তিনি সাফল্যের সাথে তাতে উত্তীর্ণ হন ।
এটা প্রমাণিত যে তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ)কে মানব জাতির নেতা হিসাবে ঘোষণা করেন।
ইব্রাহীম (আঃ) জানতে চান তার বংশধররাও নেতৃত্ব পাবেন কিনা?
আল্লাহ জানান - জালিমরা পাবেনা।
দুনিয়ার নেতৃত্ব কোন বংশের মৌরসী পাট্টা নয়।
বি. দ্র: এই আয়াত থেকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বৃত্তান্ত শুরু হয়।
১২৫ নং আয়াত : কাবা ঘর।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৫) এবং সেই সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন আমি কাবাগৃহকে মানব জাতির মিলন কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করিয়াছিলাম এবং বলিয়াছিলাম, ‘তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।’ এবং ইব্রাহীম ও ইসমািঈলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য আমার গৃহকে পবিত্র রাখিতে আদেশ দিয়াছিলাম।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কা'বাঘর মানব জাতির মিলন কেন্দ্র এবং নিরাপত্তা স্থল।
মকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান করতে বলেছেন।
ইব্রাহীম ও ঈসমাঈল (আঃ) কে কাবাঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পূত ও পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছেন।
১২৬ নং আয়াত: ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রার্থনা -১।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৬) স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলিয়াছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! ইহাকে নিরাপদ শহর করিও, আর ইহার অধিবাসীদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাহাদেরকে ফলমূল হইতে জীবিকা প্রদান করিও। তিনি বলিলেন, ‘যে কেহ কুফরী করিবে তাহাকেও কিছু কালেল জন্য জীবন উপভোগ করিতে দিব, অতঃপর তাহাকে জাহান্নামের শান্তি ভোগ করিতে বাধ্য করিব এবং কত নিকৃষ্ট তাহাদের প্রত্যবর্তনস্থল।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহকে 'রব' বলে সম্বোধন করেন।
'মক্কা' শহরকে নিরাপদ রাখতে বলেন।
এই শহরের অধিবাসী যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করেন।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন: তিনি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাইকে বস্তুগত রিজিক দান করবেন।
এরপর অবিশ্বাসীরা সীমাহীন বাবে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।
তাদের প্রত্যবর্তন স্থল খুবই নিকৃষ্ট ।
১২৭ নং আয়াত : হযরত ইব্রাহীম(আঃ) ও হযরত ঈসমাঈল (আঃ) এর প্রার্থনা -১
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৭) স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কাবাগৃহের প্রাচীর তুলিতেছিল তখন তাহারা বলিয়াছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ কর, নিশচয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কাবা ঘর নির্মাণের সময় হৃদয় দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ কর।
তাঁরা তাদের নিজেদের কৃতিত্ব প্রচারের জন্য দোয়া না করে আল্লাহর কাছে কবুলিয়্যাতের জন্য দোয়াা করেন।
কারণ তাঁরা জানেন আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
১২৮ নং আয়াত: হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও ঈসমাঈল (আঃ) এর প্রার্থনা -২
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৮) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হইতে তোমার এক অনুগত উম্মত করিও। আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি দেখাইয়া দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তাঁরা মহান আল্লাহর একান্ত অনুগত হতে চান।
তাঁরা তাদের বংশধররা আল্লাহর একান্ত অনুগত হবার জন্য দোয়া করেন।
ইবাদাত করবার নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিতে অনুরোধ করেন।
তাঁরা জানেন, আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
১২৯ নং আয়াত: হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রার্থনা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৯) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাহাদের মধ্য হইতে তাহাদের নিকট একজন রাসুল প্রেরণ করিও -যে তোমার আয়াতসমূহ তাহাদের নিকট তিলওয়াত করিবে, তাহাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে এবং তাহাদেরকে পবিত্র করিবে। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ‘
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর বংশধরদের মধ্য হতে রাসুল প্রার্থনা করেন।
তাঁর কাজ হবে আল্লাহর কিতাবে আয়াতসমূহ আবৃত্তি করবেন ।
হিকমত শিক্ষা দিবেন।
তাদেরকে পবিত্র করবেন।
অনুধাবন:
কিয়ামত দিবসের কথা বিস্মৃত হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে সেই দিন কেউ কারো জন্য কোন বিনিময়, সুপারিশ এবং সাহায্য করতে পারবে না। এরকম না ভাবি অমুক পীর সাহেব আমার জ্ন্য সুপারিশ করবেন আর আমার গুণাহ মাফ হয়ে যাবে।
রাসুলের দায়িত্ব হল - আল্লাহর বাণী ও বিধি-বিধান পৌঁছে দেয়া। ভাল কাজের জন্য সুসংবাদ ও মন্দ কাজের জন্য সতর্ক করা। আর ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে তা বাস্তবায়ন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
জালিম, অন্যায়কারী ও পাপী ব্যক্তিদের ইমামের দায়িত্ব দেয়া উচিত নয়। মসজিদের তত্ত্বাবধায়ককে সৎ ও মুত্তাকী হতে হবে।
মসজিদ আল্লাহর ঘর। তাই এর খাদেম বা সেবককে পবিত্র ও আল্লাহর ওলী হতে হবে। যে কাউকে মসজিদ দেখা শোনার মত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া উচিত নয়।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়া থেকে বোঝা যায় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মুমিনদের পার্থিব জীবনের কল্যাণেরও প্রয়োজন আছে।
কাফেরদের পার্থিব ধন-সম্পদ এটা প্রমাণ করে না যে তারাই শ্রেষ্ঠ বা তারা সঠিক পথে আছে।
দোয়া করার সময় শুধু নিজের বৈষয়িক দিকের কথা চিন্তা না করে সন্তান ও ভবিষ্যত বংশধরদের কথা চিন্তা করা উচিত।
- নবী-রসুলরা তাদের মহত্তম কাজের জন্য কখনো অহমিকা প্রকাশ করেন না।
- আল্লাহর সামনে তারা যথাসম্ভব বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করেন।
- নিজেদের কৃতিত্ব প্রচারে লিপ্ত হন না।
- কাজ করতে গিয়ে যে মব ভুল-ত্রুটি থাকে তার জন্য তারা তাওবা ইস্তিগফার করেন।
- তাদের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।
- তাঁরা তাদের কাজের জন্য মানুষের প্রশংসার ফিকির করেন না।
- এখানে উল্লেখ্য ইব্রাহীম (আঃ) এর এই দোয়াতে মহানবী (সঃ) এর শুভাগমনের বিষয়টি ছিল।