সূরা বাকারা, রুকু ১৪। আদর্শিক সংঘাত।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 

সূরা বাকারা । রুকু -১৪

আয়াত  ১১৩-১১২

আদর্শিক সংঘাত। 


আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়: 


১১৩ নং আয়াত: ইহুদী- খ্রীষ্টানদের মতভেদ। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ইহুদীরা বলে খ্রীষ্টানদের কোন ভিত্তি নাই’ এবং খ্রীষ্টানরা বলে, ‘ইহুদীদের কোন ভিত্তি নাই’; অথচ তাহারা কিতাব পাঠ করে। এইভাবে যাহারা কিছুই জানে না তাহারাও অনুরূপ কথা বলে। সুতরাং যে বিষয়ে তাহারা মতভেদ করিত কিয়ামতের দিন আল্লাহ উহার মীমাংসা করিবেন। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • পরস্পরকে ভিত্তিহীন বলে দাবী করে কুটিীল বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। 

  • তারা প্রত্যেকেই আপন কিতাব পাঠ করে; কিন্তু  সত্যকে স্বীকার করে না। 

  • অন্যান্য মুশরিক যারা কিছু জানে না  তারাও নিজেদেরকে ছাড়া অন্যদের মিথ্যাবাদী বলে। 

  • কিয়ামতের দিন আল্লাহ এ প্রশ্নের মীমাংসা করবেন কে মিথ্যাবাদী আর কে সত্যবাদী। 


১১৪ নং আয়াত:  সবচেয়ে বড় জালিম। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১৪) যে কেহ আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁহার নাম স্মরণ করিতে বাধা প্রদান করে এবং উহাদের বিনাশ সাধনে প্রয়াসী হয় তাহার অপেক্ষা বড় জালিম কে হইতে পারে? অথচ ভয়-বিহ্বল না হইয়া তাহাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ সংগত ছিল না। পৃথিবীতে তাহাদের জন্য লাঞ্ছনা ভোগ ও পরকালে তাহাদের জন্য মহাশক্তি রহিয়াছে। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মসজিদসমূহে ইবাদত করতে যে বাধা দেয় সে সবচেয়ে বড় জালেন।

  • তারা মসজিদ ধ্বংস বা বিনাশ সাধনে অগ্রণী ।

  • আল্লাহর ঘরে বিনীত ও ভীত অবস্থায় প্রবেশ করা উচিত্‌। 

  • অথচ তারা নির্ভয়ে মসজিদে প্রবেশ করে। 

  • এর প্রতিদান স্বরূপ পৃথিবীতে রয়েছে লাঞ্ছনা এবং অপমান।

  • পরকালে রয়েছে মহা শাস্তি। 


১১৫ নং আয়াত: কিবলা 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১৫) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই; এবং যেদিকেই তােমরা মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকই আল্লাহর দিক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। (ওয়্যাছিয়্যুল আলীম) 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কোনও দিক সত্তগতভাবে কোনও রকম পবিত্রতা এবং মর্যাদার ধারক বা বাহক নয়। 

  • পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহর সৃষ্টি। 

  • সব দিক আল্লাহর।

  • আল্লাহ সর্বব্যাপী এবং সর্বজ্ঞ।  


১১৬ নং আয়াত:  স্রষ্টা ও সৃষ্টি -১।

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১৬) এবং তাহারা  বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন।’ তিনি অতি পবিত্র। বরং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সব আল্লাহরই। সব কিছু তাাঁহরই একান্ত অনুগত।

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • স্রষ্টা এক তুলনাহীন সত্তা । তিনি ও তাঁর সৃষ্টি কখনো এক হতে পারে না। 

  • আল্লাহর সন্তান আছে তা অমূলক ধারণা। জন্মদাতা বলে জাতকের সাথে একই প্রকৃতির বলা হয়েছে।

  • 'সুবহানাল্ল্লাহ বলে তার প্রতিবাদ করা হচ্ছে যে আল্লাহ পবিত্র। 

  • পৃথিবীর আকাশ ও জমীনে যা কিছু আছে সবকিছুর উপর নিরংকুশ মালিকানা আল্লাহর। 

  • সবকিছু মহান আল্লাহর আজ্ঞাধীন এবং অনুগত।  


১১৭ নং আয়াত: স্রষ্টা ও সৃষ্টি -২।  

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১৭) আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা এবং যখন তিনি কোন কিছু করিতে সিদ্ধান্ত করেন তখন উহার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’ আর উহা হইয়া যায়। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এর মাঝে যা কিচু আছে তার স্রষ্টা 

  • এই সৃষ্টি জগত উদ্ভূত হয়েছে মহান আল্রাহতায়ালার ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ দ্বারা। 

  • স্রষ্টা কর্তৃক  কোন জিনিস সৃষ্টি করার ইচ্ছেটাই তার সৃষ্টি হবার জন্য যথেষ্ট।  


১১৮ নং আয়াত: মুশরিকদের অমূলক দাবী। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১৮) এবং যাহারা কিছু জানে না তাহারা বলে, ‘আল্লাহ আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না কেন? কিংবা কোন নিদর্শন আমাদের নিকট আসে না কেন? এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও তাহাদের অনুরূপ কথা বলিত। তাহাদের অন্তর একই রকম। আমি দৃঢ় প্রত্যয়শীলদের জন্য নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বিবৃত করিয়াছি। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • ইহুদী এবং খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের লোকদের বলা হয়েছে তারা জানে না অর্থ্যাৎ তারা মূর্খ। 

  • তারা অহংকারে আচ্ছন্ন হয়ে আল্লাহ কেন তাদের সাথে কথা বলে না প্রশ্ন তুলে। 

  • পূর্বসূরীদের স্বভাব, চিন্তাধারা, কথা, অন্তর ও পথভ্রষ্টতার সাথে তাদের মিল আছে। 

  • আল্লাহ বহু প্রমাণ ও নিদর্শন দিয়েছেন এবং তা চারিদিকে ছড়িয়ে আছে যা শুধু দৃঢ় বিশ্বাসীরা বুঝতে পারে। 


১১৯, ১২০ ও ১২১  নং আয়াত: হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে সান্তনা প্রদান। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১৯) আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করিয়াছি। জাহান্নামীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হইবে না। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১২০) ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হইবে না, যতক্ষণ না তুমি তাহাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর। বল, ‘ আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ।’ জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাহাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর তবে আল্লাহর বিপক্ষে তোমার কোন অভিভাবক থাকিবে না এবং কোন সাহায়্যকারীও থাকিবে না। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১২১) যাহাদেরকে আমি কিতাব দিয়াছি তাহারা যথাযথভাবে ইহা তিলওয়াত করে তাহারাই ইহাতে বিশ্বাস করে; আর যাহারা ইহা প্রত্যাখ্যান করে তাহারা ক্ষতিগ্রস্থ । 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসাবে পাঠান হয়েছে। 

  • জাহান্নামীদের ব্যাপারে কখনো তাঁকে কোন  প্রশ্ন করা হবে না। কারণ এ ব্যাপারে তাঁর কোন দায়িত্ব নেই। 

  • ইহুদী-খ্রীষ্টানরা কখনোই খুশী হবে না কারণ তারা ভিন্ন মতাবলম্বী। 

  • সমঝোতার হাত যতই বাড়ান হোক না কেন একমাত্র তাদের ধর্ম মত অনুসরণ করলে তারা খুশী হয়। 

  • প্রকৃত হিদায়াত আল্লাহর হিদায়াত। 

  • নবী (সঃ) এর কাছে ওহীর মাধ্যমে যে জ্ঞান এসেছে এর পরে অন্য কারো মত অনুসরণ করা যাবে না। 

  • যারা সে পথ অনুসরণ করবে তাদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। 

  • আল্লাহতায়ালার কাছে কোন মানুষের গুরুত্ব ও মর্যাদা তার ব্যক্তিসত্তার কারণে নয় । ব্যক্তির গুরুত্ব ও মর্যাদা আল্লাহর আনুগত্যের কারণে। 

  • আল্লাহ সে সব লোকের প্রশংসা করছেন যারা আসমানী কিতাব শুধু পাঠ নয় ; মন-প্রাণ দিয়ে সমস্ত হুকুম মেনে নিয়ে আমল করে । অথ্যাৎ সে শুদ্ধ করে পড়ে, বোঝে, আমল করে ও প্রচার করে।    

  • যারা তা অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ । 


অনুধাবন: 

  • মানুষের হিংসা ও প্রধান্য বিস্তারের মনোভাব তাকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে এবং সে তখন আসল সত্য হারিয়ে ফেলে। সে শুধু নিজেকেই সত্য পথের অনুসারী মনে করে যেরকম করেছিল ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা।  

  • যখন অন্যায়ভাবে কোন দাবী করে ও বিদ্বেষী হয়ে পড়ে তখন জ্ঞানী-মূর্খ যেই হোক না কেন একইরকম চিন্তা-ভাবনা  করা শুরু করে। 

  • সোজা কথায় অজ্ঞতা, অহংকার এবং একগুয়েমী আমাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয় ফলে সত্যকে চিনতে পারে না। 

  • মসজিদ বা আল্লাহর ইবাদতখানা ধ্বংস করা করার অর্থ হল মসজিদের বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক ভিত্তি ধ্বংসের চেষ্টা করা। কারণ মসজিদ হল  আল্লাহর উপাসনা ঘর এবং কুফর ও শিরকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ঘাটি। মসজিদ রক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। 

  •  আল্লাহ সমগ্র সত্ত্বা ও অস্তিত্বের সৃষ্টিকর্তা। তিনি সব কিছুর উপর কর্তৃত্বের অধিকারী । তাঁর কোন স্ত্রী সন্তানের প্রয়োজন নেই। 

  •  আল্লাহর বাণী নিয়ে অযৌক্তিক প্রশ্ন করা উচিত নয়। নবীদের দায়িত্ব হল আল্লাহর বাণী সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রচার করা। জনগণকে সত্য গ্রহণে বাধ্য করা নয়। কেউ যদি সত্য না মেনে জাহান্নামে যায় - সে জন্য নবী রাসুলরা দায়ী নন। 

  • আল্লাহ কোন বিশেষ স্থানে অবস্থান করেন না। তিনি আছেন সব দিকেই। কিবলার তাৎপর্য হল ইবাদতকে একমুখী ও সমন্বিত করা। তৌহীদের কেন্দ্র কাবা শরীফকে ধরা হয়েছে। 

  •  ঐশী গ্রন্থ সত্য সন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে পাঠ করতে হবে। তাহলে আল্লাহর উপর ঈমান আনার তৌফিক লাভ করা যায়। কুরআন সম্মানের সাথে পাঠ করাই যথেষ্ট নয়। পথ নির্দেশ লাভ ও সৌভাগ্যশালী হতে হলে কুরআনের অর্থ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url