সূরা বাকারা, রুকু ১৩ ।পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ বাতিল ।

  • কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
  • নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


  •  

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 

সূরা বাকারা । রুকু -১৩

আয়াত  ১০৩ - ১১২

পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ বাতিল 

  •  

আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়। 

বি.দ্র. : মদীনায় বসবাসরত একদল ইহুদী ছিল যারা মুসলমানদের গ্রহণ করতে পারে নি। তারা যখন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাথে দেখা করত তখন 'রাইনা’ বলত।  এটি আরবী ভাষায় নির্দেশসূচক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ‘দয়া করিয়া আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’। এভাবে বললে কোন বেয়াদবী বা টিটকারী করা হয়না । হিব্রু ভাষাতে এর  কাছাকাছি আরেকটি শব্দ আছে যা বিদ্রূপ করার জন্য ব্যবহৃত হত। আরবীতে ‘রাইনা’ শব্দের মধ্যে যে আরবী হরফ ‘আইন’ আছে তা লম্বা করে পড়লে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। এর মানে হয় ‘আমার রাখাল বা নির্বেধ বা বোকা বা হতভাগা ইত্যদি।  আরবীতে যেহেতু বাহ্যিকভাবে শব্দটিকে কোন দোষ ছিল না, তাই কতিপয় মুসলিমও না বুঝে এ শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করে। এতে ইহুদীরা খুব মজা পেত। এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের সতর্ক করা হয়েছে।ভবিষ্যতে যাতে তারা এ ধরণের আচরণ না করে।  এর বদলে ‘উনযুরনা’ শব্দ বলতে আল্লাহ আদেশ দেন। 


১০৪ নং আয়াত: ইহুদীদের দুষ্কর্ম সম্পর্কে সচেতন।

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০৪ )  হে মুমিণগণ! রাসুল (আঃ) এর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য  'রা‘ইনা বলিও না, বরং উনজুরনা বলিও এবং শুনিয়া রাখ, কাফিরদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কোন শব্দের যদি মন্দ অর্থ থাকে অথবা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে সে রকম শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়।

  • ’রাইনা’ বললে  ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। তার বদলে ‘উনজুরনা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

  • বিশেষ করে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে কথা ও আচরণে সতর্কতা অবলম্বন।  

  • কাফিরদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। 


১০৫ নং আয়াত: কিতাবী কুফরকারী ও মুশরিক যারা মুসলিমদের অকল্যাণকামী।   

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০৫) কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করিয়াছে তাহারা এবং মুশরিকরা ইহা চাহে না যে, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হউক। অথচ আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা নিজ রহমতের জন্য বিশেষরূপে মনোনীত করেন এবং আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। ( জুল ফাদলিল 'আজীম) 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কাফির ব্যক্তি আহলে কিতাব এবং মুশরিক সবার মধ্যে থাকতে পারে।

  • তারা কখনোই চায়না  মুসলিমদের প্রতি আল্লাহর করুণা নাযিল হোক। 

  • আল্লাহ যাকে ইচ্ছ করেন তাকে করুণা দান করেন। 

  • আল্লাহ মহা অনুগ্রহের মালিক ।


১০৬ নং আয়াত: মানসুখ আয়াত। 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০৬) আমি কোন আয়াত রহিত করিলে কিংবা বিস্মৃত হইতে দিলে তাহা হইতে উত্তম কিংবা সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি । তুমি কি জান না যে, আল্লাহই সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। (ইন্নল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িং ক'াদীর। )

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ প্রয়োজনবোধে আয়াত রহিত করেন। 

  • তার বদলে উত্তম আয়াত দেন। 

  • স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে আল্লাহর সর্ববিষয়ে সদা সর্বক্ষম। 


বি. দ্র: আল্লাহতায়ালার শাশ্বত রীতি এই যে, তিনি তাঁর হিকমা ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাঁর বিধনাবলীতে যুগোপযোগী পরিবর্তন করেন। যদিও ধর্মের মৌলিক আকীদা সমূহ যেমন - তাওহীদ, রিসালত, আখিরাত এগুলো অপরিবর্তিত থেকেছে । মূসা (আঃ) কে যে সব আমল ও বিধান দেয়া হয়েছিল তা ঈসা (আঃ) এর সময় কিছু পরিবর্তিত হয়েছে । হযরত মুহাম্মদ (সঃ)  এর আমলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য  রেখে উপযুক্ত এবং আরো ভালো বিধনাবলী দিয়েছেন।  


১০৭ নং আয়াত : আল্লাহর পরিচয়। 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

তুমি কি জান না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহরই ? এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবকও নাই, সাহায্যকারীও নাই। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহর একক সত্তা । 

  • পৃথিবী এবং আকাশে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনি । 

  • আল্লাহই একমাত্র অভিভাবক এবং সাহায্যকারী ।


১০৮ নং আয়াত: প্রশ্ন সম্পর্কে সতর্কীকরণ ।

বি.দ্র: কিছু ইহুদী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর ঈমান আনার পরিবর্তে তাঁকে নানা  ধরণের প্রশ্ন করে উত্যক্ত করত। তাই এই আয়াতের নাযিল হয়। সে সাথে সাথে মুসলিমদেরও সবক দেয়া হচ্ছে। 

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০৮)  তোমরা কি তোমাদের রাসুলকে সেইরূপ প্রশ্ন করিতে চাও, যেইরূপ পূর্বে মূসাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল? এবং যে কেহ ঈমানের পরিবর্তে কুফরী গ্রহণ করে, নিশ্চিতভাবে সে সরল পথ হারায়।

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মহান আল্লাহ জানতে চেয়েছেন রাসুল (সঃ)কে বিব্রত করতে কোন প্রশ্ন মনে আসে কিনা? 

  • ইহুদীরা হযরত মূসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনা সত্বেও নানা বাজে প্রশ্ন করে উত্যক্ত করত। 

  • অহেতুক এবং অবাধ্যতামূলক প্রশ্ন করা ঈমানের পরিবর্তে কুফর অবলম্বন করার শামিল। 

  • তারা সরল পথ হারিয়ে বিপথগামী হয়েছে। 


১০৯  নং আয়াত: হিংসামূলক মনোভাব।

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০৯) তাহাদের নিকট সত্য প্রকাশ হওয়ার পরও, কিতাবীদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের ঈমান আনিবার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশত আবার তোমাদেরকে কাফিররূপে ফিরিয়া পাওয়ার আকাংখা করে। অতএব তোমরা ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, যতক্ষণনা আল্লাহ কোন নির্দেশ দেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান। 

    —----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কিতাবীদের মধ্যে প্রকৃত সত্য প্রকাশ হবার পরেও দ্বন্দে থাকে। 

  • তারা ঈমান আনে কিন্তু তারপরেও ঈর্ষার কারণে মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে রাখতে চায়। 

  • অর্থ্যাৎ তারা চায় যে মুসলিমরা আবার কাফির হয়ে যাক। 

  • মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা ও উপেক্ষা করতে বলেছেন। 

  • আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

  • মনে রাখতে হবে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। 


১১০ নং আয়াত:  আল্লাহর কতিপয় নির্দেশ। 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১০)  তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও । তোমরা উত্তম কাজের যাহা কিছু নিজেদের জন্য পূর্বে প্রেরণ করিবে আল্লাহর নিকট তাহা পাইবে। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার দ্রষ্টা। (বাছীর) 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • নামাযকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

  • যাকাত আদায় করে। 

  • নিজের মঙ্গলের জন্য সৎকাজ করে 

  • আখেরাতে আল্লাহর কাছ থেকে এর বিনিময় পাবে।

  • কারণ আল্লাহ প্রত্যেকের কাজের উপর দৃষ্টি রাখেন। 


১১১ নং  আযাত: ইহুদীদের অন্যয্য দাবী । 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১১) এবং তাহারা বলে, 'ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান ছাড়া আর কেহ কখনই জান্নাতে প্রবেশ করিবে না।' ইহা তাহাদের মিথ্যা  আশা । বল, 'যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • ইহুদীরা অহংকার ও আত্ম প্রবঞ্চনার জন্য দাবী করতো তারা ছাড়া আর কেউ জান্নাতে যাবে না।

  • আল্লাহ বলেছেন এটা কেবল তাদের মনোবাসনা। 

  • রাসুল (সঃ)কে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন  তাদের কাছে এর সপক্ষে প্রমাণাদি পেশ করতে বলেছেন। 

  • তারা তা পারবেনা কারণ তারা সত্যবাদী নয়। 


১১২ নং আয়াত :আমল গৃহীত হবার শর্ত । 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১২) হ্যঁ, যে কেহ আল্লাহর নিকট  সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে এবং সত্‌কর্মপরায়ণ হয় তাহার ফল তাহার প্রতিপালকের নিকট রহিয়াছে এবং তাহাদের কোন ভয় নাই ও তাহারা দুঃখিত হইবে না। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • যে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। 

  • নেককাজ করে অর্থ্যাৎ সৎকর্মপরায়ন। 

  • আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিফল পাবে।

  • তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই। 



অনুধাবন: 

  •  এই রুকু থেকে আমার প্রথম অনুধাবন এই যে আমাদের জীবনে আমরা কোন না কোন সময় এমন সব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যেখানে ইচ্ছা করে দুরভিসন্ধিমূলক প্রশ্ন করে। অথচ এমন ভাব করে যেন ভাল কথা বলছে। অথচ পিছনে গিয়ে হাসাহাসি করে। এরকম পরিস্থিতি বুঝতে হবে। নিজেও কখনো এরকম প্রশ্ন করা যাবে না। অর্থ্যাৎ আল্লাহর হুকুম হচ্ছে চিন্তা ও কথায় সৎ হতে হবে। কোন ব্যবধান থাকবে না।

  • আরেকটি বিশেষ অনুধাবন এই যে, বড়দের এবং শিক্ষকদের সাথে কথা বলার সময় উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে সম্মান প্রদর্শন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। 

  • কাউকে হেনস্থা করার জন্য কোন অসঙ্গত প্রশ্ন করা উচিত নয়। সব সময় সঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্ন করা উচিত। 

  •  মহান আল্লাহ যুগ ও কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাঁর বাণীর পরিবর্তন করেন যুগ ও কালের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য  রেখে।  বিভিন্ন যুগে তিনি বিভিন্ন নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। 

  • তিনি যার জন্য ভালো মনে করেন তাকেই অনুগ্রহ প্রদান করেন এবং যাদের জন্য প্রয়োজন মনে করেন তাদের কাছে নবী পাঠান। 

  • শুধু ঈমান বা বিশ্বাসই যথেষ্ট নয়। তার সাথে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি থাকতে হবে। 

  •  মুসলমানদের কল্যাণ ইসলামের শত্রুরা চায় না। তাই তাদের উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা করা 

  • শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রথমেই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া ঠিক নয়। প্রথমে ক্ষমা প্রদর্শন করতে হবে  যাতে তারা সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ পায়। 

  •  যে আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণ রূপে আত্ম সমর্পণ করতে পারে সে দুনিয়ার কোন কিছুকে ভয় পায় না। সব সময় আল্লাহকে অনুভব করে । 

  •  আমরা  মুসলমান বলেই বেহেশতে যাব তা ঠিক নয়। বেহেশতে যাবার শর্ত হল ঈমান ও সৎকাজ।   

  • হিংসা মানুষকে সত্য থেকে বিচ্যুত হতে অনুপ্রাণিত করে। 

  • হিংসার কারণে কিতাবীদের মধ্যে অনেকে চাইত মুসলিমরা ইসলাম থেকে দূরে থাকুক। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url