বার্ধক্য ভাবনা।
বার্ধক্য ভাবনা।
মানুষের জীবন নদীর মত বয়ে চলেছে। এই নদীটি আর কিছু নয়। তা হচ্ছে ‘সময়’ । জন্মের পর থেকে মানুষের জীবনের যত দিন যায়, মানুষের সময় অতিবাহিত হতে থাকে আর সে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে ‘বয়স’ । মানুষের জীবন একটি নির্দিষ্ট সময়ের সীমারেখায় আবদ্ধ।
কেউ জীবনে অনেক সময় পায় । যাকে আমরা দীর্ঘজীবি বলি । আবার কেউ অল্প বয়সেই পৃথিবীর এই জীবন থেকে বিদায় নেয়। সব মানুষই দীর্ঘজীবি হতে চায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় কাউকে কাউকে আগেই এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়।
আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আল্লাহ যাদের দীর্ঘ আয়ু দিয়েছেন তার মধ্যে আমিও আছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখতে পাচ্ছি এবং উপলব্ধি করছি নিজের মাঝে পরিবর্তন।
জীবনের প্রতি ভালবাসা লুকিয়ে রাখতে পেরেছি। কিন্তু বয়স পারিনি লুকাতে। আমার চেহারার মাঝে ফুটে উঠেছে। এখন বুঝতে পারছি শৈশবকাল, যৌবনকালের মর্যাদা।
বিলি গ্রাহমের একটি উক্তি পড়েছিলাম “ আমার সারা জীবন আমাকে শেখানো হয়েছে কিভাবে মরতে হয়, কিন্তু কেউ আমাকে শেখায়নি কিভাবে বৃদ্ধ হতে হয়।” আমি আগে যদি ভাবতাম বা জানতাম এতদিন বেঁচে থাকব তাহলে আমি নিজের ভালো যত্ন নিতে পারতাম।
আমার শারিরীক যত্ন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, মানসিক সুস্থতা সব কিছুই বৃদ্ধ হবার আগেই করা উচিত ছিল। কি আর করা। তাই ভেবেছি বার্ধক্য সম্পর্কে নিজে জানব এবং আমার অনুভূতি, ভাবনা সবার সাথে শেয়ার করব। একটু অগোছালো ভাবে লেখা হবে।
যতই বৃদ্ধ হইনা কেন বেঁচে আছি। সক্ষমতাও আছে। আবার সেই সাথে অসুস্থতাও আছে। জীবন আছে। জীবন মানেই কর্ম এবং কর্মই জীবন। বার্ধক্য কেউ রাতারাতি অর্জন করতে পারে না। এটি একটি সামগ্রিক জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। আমাদের উচিত বার্ধক্য অনুকূল সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলে বার্ধক্যকে সফল করে তোলা।
সফল বার্ধক্যায়নের অর্থ শুধু রোগমুক্ত থাকা নয়। এটি একটি সামষ্টিক বিষয়। যার মধ্যে আছে - মানসিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়। বার্ধক্যে একাকীত্ব , অসহায়ত্ব বোধ এক বিরাট সমস্যা। সমধান বৃদ্ধ ব্যক্তির হাতেই। পরম সত্যকে মেনে নেয়া এবং আধ্যাত্মিকতা চর্চা করা।
আধ্যাত্মিকতা মানুষের মনে প্রশান্তি আনে। বাস্তবতা মেনে নিতে সাহায্য করে। আধ্যাত্মিক শক্তির কারণেই মানুষ হচ্ছে মানুষ। আল্লাহর প্রাণীকুলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী। মানুষকে সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল হতে শিক্ষা দেয়। যা তার দুর্ভাগ্য, কষ্ট, দুর্দশার সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
পবিত্র কুরআনে সূরা ইয়াসীনে ৬৮ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, “ আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে তো জরাগ্রস্ত করে দিই।”
সূরা আর-রূমের ৫৪ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, “আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বলতা থেকে, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্যে।”
সূরা আন-নাহল এর ৭০ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে “ আর আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে নিকৃষ্টতম বয়সে; যাতে জ্ঞান লাভের পরেও তার সবকিছু অজানা হয়ে যায়।”
সূরা আন-নাহলের ৭০ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটানো হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হীনতম বয়সে প্রত্যাবর্তিত করা হয়, যার ফলে সে জানার পরও যেন কিছুই জানে না। “
আল্লাহ পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, মানুষকে নবজাতক শিশুরূপে সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে বড় করেন। জ্ঞান-বুদ্ধিতে পরিপূর্ণতা দেন। তারপর যার জন্য যে সময় নির্ধারিত আছে, সে অনুযায়ী তার নশ্বর দেহ থেকে আত্মাকে বের করে নেন। দেহ নশ্বর কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর।
একটু যদি নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করেন। ভাবেন আপনার সৃষ্টি কিভাবে আল্লাহর সৃষ্টির নৈপূণ্যে, সৌন্দর্য ও জ্ঞানকে তুলে ধরেছে। তা হলে বুঝতে পারবেন তাঁর করুণাধারাকে । উপলব্ধি করুন কিভাবে বিভিন্ন নেয়ামত দিয়ে আল্লাহ আপনাকে ধন্য করেছেন। আপনার একাকীত্ব, অসহায়ত্ব কেটে যাবে।
আসুন, আমরা আমাদের বার্ধক্যকে ভালবাসি। এটা ভাববেন না বৃদ্ধদের ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। এটা স্রেফ বাজে কথা। অস্থায়ী পার্থিব জীবনের জাঁকজমক, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা যে আমাদের স্থায়ী পরকালের জীবন থেকে ভুলিয়ে রেখেছিল। তা নিয়ে চিন্তা করি।