সূরা আনফাল থেকে অনুধাবন

কুরআন পড়ুন, বুঝে  পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
সূরা আনফাল 



জিহাদ ও কতিপয় বিধান: 

এই সূরা শুরু হযেছে বদর যুদ্ধের গণিমতের আলোচনা দিয়ে। অর্থ্যাৎ  শুরু হয়েছে যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আবার শেষ হয়েছে যুদ্ধবন্দীদের আলোচনা দিয়ে। 
এই সূরাটির মূল আলোচ্য বিষয় 'জিহাদ' এবং তার কতিপয় বিধান। 

(ক)   গণীমত সম্পর্কে মৌলিক নীতিমালা। (১)

  1. যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হচ্ছে আল্লহ ও রাসুলের।
  2. রাসুল (সঃ) নিজে বণ্টন করবেন। 
  3. আল্লাহকে ভয় করতে হবে। 
  4. পারস্পরিক সদ্ভাব  বজায় রাখতে হবে। 
  5. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে হবে। 

(খ)  গণিমতের মাল বণ্টন করার নিয়ম। (৪১) 

  1. পাঁচ ভাগে ভাগ করতে হবে। 
  2. এক ভাগ আল্লাহর রাসুলের, তাঁর আত্মীয়-স্বজন এবং এতিম ,মিসকীন ও পথিকদের জন্য। 
  3. বাকী চার ভাগ  মুজাহিদ অর্থ্যৎ যারা যুদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। 

(গ)  জিহাদের উদ্দেশ্য 

  1.  জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান। (৬৫)
  2. খাঁটি মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ (৩৭) 
  3. বাতিলপন্থীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা। (৮) 
  4. সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য হিসাবে প্রতিপন্ন করা। (৮) 
  5. ফিতনা দূর করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা। (৩৯) 
  6. জিহাদের প্রধান উদ্দেশ্য পার্থিব লাভ-লোকসান নয় , মহত্তর উদ্দেশ্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। 


(ঘ) মুজাহিদদের প্রয়োজনীয় গুণাবলী।

  1. জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সাধ্যমত যোগাড় করা  ।  (৬০) 
  2. কাফিরদের ন্যায় অহংকার করা যাবে না।  (৪৭) 
  3. সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করে। (৪৫) 
  4. সৈন্যদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। (৪৬) 
  5. শত্রুদের বিধ্বস্ত করার চেষ্টা করে।  (৫৭) 
  6. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না (১৫) 
  7. পলায়ন করাকে অন্যায় মনে করে। (১৬)  
  8. আল্লাহ মুজাহিদদের সাহায্য করেন। (৬৫)  

(ঙ) যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে বিধান

  1. দেশে শত্রু সম্পূর্ণ ভাবে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী করে রাখা ঠিক নয়। (৬৭)
  2. পার্থিব লাভের জন্য অনিষ্টকর শত্রুকে ছেড়ে দিয়ে বিপদ স্থায়ী করা ঠিক নয়। (৬৭) 
  3. যারা  নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনবে তাদের ক্ষমা করা। (৭০) 
  4. বিশ্বাসঘাতকতা মনোভাবাপন্ন যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে নবী (সঃ)কে পরিস্থিতি অনুযায়ী  সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা  (৭১) 
  5. যুদ্ধ জয়ের মূহুর্তে দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন। (৬১) 

 (চ) যুদ্ধে সফলতার মূলনীতি।  (১৫, ৪৫, ৪৬) 

  1. সুপরিকল্পিতভাবে শত্রুদের আক্রমণ করতে হবে।  (১৫)
  2. মুসলমানরা যখন প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হবে তখন পশ্চাদপসারণের কোন অবকাশ নেই। (১৫)
  3. একমাত্র যুদ্ধ কৌশলের কারণে পিছু হটা যাবে। (১৬)
  4. যোদ্ধাকে মনে রাখতে হবে হয় জয়লাভ না হয় মৃত্যু। (১৫) 
  5. যুদ্ধে ক্ষেত্রে অবিচল থাকতে হবে। (৪৫, ৬৬)
  6. আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করতে হবে। (৪৫)
  7. আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
  8. নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল রাখতে হবে । (১)
  9. বিতর্কে লিপ্ত হয়ে সাহস  ও শক্তি হারানো চলবে না। (৪৬) 
  10. ধৈর্য্যর সাথে অধ্যবসয়ী হতে হবে। (৪৬)

 ------

আল্লাহর আহ্বান: ওহে যারা ঈমান এনেছ

হান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে একটি বিশেষ গুণবাচক নাম ‘  ওহে ইমানদার ’ বলে সরাসরি সম্বেধন করেছেন। এতে যে শুধু তাদের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে পৃথক 
করেছেন তা নয়। তিনি তাদেরকে তাঁর (আল্লাহ) নিজের সাথে এবং নবী (সঃ) এর সাথে সম্পর্কিত করেছেন। তিনি তাদেরকে এ নামে সম্বোধন করে বিশেষ কতগুলি কাজ করতে আদেশ দিয়েছেন। 
সূরা আনফালে এরকম ছয়টি আয়াতে সম্বোধন করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 
নির্দেশ সমূহ। 

  • কাফের সেনাদের দেখে পালিয়ে না যেতে এবং মনোবল দৃঢ় রাখতে। (১৫)

  • যুদ্বের কৌশল ও দলের লোকবল বৃদ্ধির  জন্য স্থান পরিবর্তনের অনুমতি দেয়া হয়। (১৬) 

  • বিনা দ্বিধায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করার নির্দেশ (২০)

  • কুরআন ও তাঁর উপদেশ অন্তর দিয়ে শুনে তা মেনে চলার নির্দেশ। (২০)

  • যারা সত্য শোনার পর নিজ জীবনে প্রয়োগ করে না, তাদের মত হতে নিষেধ (২১)

  • আল্লাহ ও রাসুলের আহ্বানে সাড়া প্রদানের নির্দেশ। (২৪) 

  • আল্লাহর সম্মুখে সমবেত হতে হবে এই চেতনায় অন্তরের পাপ চিন্তা পরিহার করতে হবে। (২৪)

  • বিশ্বাসঘাতকতা না করা এবং আমানতের খেয়ানত না করার নির্দেশ। (২৭) 

  • মানুষ সাধারণত পার্থিব সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির কারণে আমানতের খিয়ানত করে। তা থেকে বিরত থাকতে হবে। (২৮)  

  • আল্লাহকে ভয় পাবার নির্দেশ যাতে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য,পাপ মোচন এবং ক্ষমা পেতে পারে। (২৯) 

  • প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় অবিচল বা দৃঢ় থাকার নির্দেশ। (৪৫)

  • আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করার নির্দেশ। (৪৫) 

  • আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ মেনে চলার নির্দেশ। (৪৬)

  • পরস্পরের মধ্যে না বিবাদ করার নির্দেশ। (৪৬)

  • ধৈর্য্য ধারণ করার নির্দেশ। (৪৬) 



আনফালে বর্ণিত প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। 


মুমিন আরবী শব্দ । যার আভিধানিক অর্থ বিশ্বাসী, ঈমানদার ও আস্থাজ্ঞাপনকারী। এ শব্দ  দ্বারা সে সব ব্যক্তিকে বোঝায় যারা মৌখিক  ও দৃঢ়ভাবে ইসলামকে ‍নিজ ধর্ম স্বীকারের পাশাপাশি তার অন্তর -বাহিরের সব কর্মকান্ডে তা সে ধারণ করে। আল্লাহর নির্দেশাবলী মনে-প্রাণে মেনে চলে এবং আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পণ করে। 


মানুষ কিভাবে প্রকৃত মুমিন হবে সে সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা সূরা আনফালের ২,৩ ও ৪ নংআয়াতগুলিতে মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এরশাদ করেছেন :

  • আল্লাহকে স্মরণ করে। 

  • আল্লাহকে স্মরণের সময় ভয়ে হৃদয়ে বিশেষ স্পন্দন শুরু হয়। 

  • কুরআনের আয়াত পড়ে তাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং ঈমানের উন্নতি হয়। 

  • আল্লাহর উপর নির্ভর করে। 

  •  আল্লাহর স্মরণে তারা বিনয়ে মস্তক অবনত করে। 

  • তারা যথাযথভাবে সালাত কায়েম করে। 

  • আল্লাহ তাকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে যাকাত ও দান-খয়রাত করেন।

  • তারা অল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পূর্ণ স্থান লাভ করবেন।

  • বিশেষ ক্ষমা পাবেন।

  • মহান আল্লাহ তাদের দিবেন মর্যাদা, ক্ষমা করবেন এবং  সম্মানজনক জীবিকার ব্যবস্থা করবেন। 

প্রকৃত মুমিন হবার উপায় কি - এ সম্পর্কে ৭৪ নং আয়াতে বলেছেন:

  •  ঈমান এনেছে দ্বীনের জন্য দেশ ত্যাগ করেছে। 
  • আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। 
  • মুমিণদের  যারা সাহায্য করেছে। 
  • আশ্রয় দান করেছে।
  • যাদের জন্য আল্লাহ বরাদ্দ করেছেন ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। 




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url