সূরা আনফাল । রুকু ১০ । হিজরত ভিত্তিতে সাহাবাদের শ্রেণী বিভাগ।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। 

সূরা আনফাল । রুকু ১০। 

আয়াত  ৭০ - ৭৫। 
হিজরত ভিত্তিতে সাহাবাদের শ্রেণী বিভাগ।  


আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়: 


৭০ নং আয়াত: বদর যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ কারীদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে নেয়ামত দানের প্রতিশ্রুতি। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৭০) হে নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদের বল, ‘আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভাল কিছু দেখেন তবে তোমাদের নিকট হতে যা নেয়া হয়েছে তা অপেক্ষা উত্তম কিছু তিনি তোমাদের দান করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু । (গাফুরুর রাহিম) 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মহান আল্লাহ নবী (সঃ)কে তাঁর  নিয়ন্ত্রণে যে সব যুদ্ধ বন্দী আছে তাদের বলতে নির্দেশ দিয়েছেন 

  • ’ভালো কিছু দেখেন’ - কথাটির অর্থ  যদি ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা এবং মন-মানসেকতায় কল্যাণকর কিছু দেখেন।

  • যারা  নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনবে  যা তারা হারিয়েছে তার থেকেও অনেকগুণ বেশী নেয়ামত পাবে। 

  • আল্লাহ তাদের ক্ষমার আশ্বাস দেন। 

  • আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অসীম দয়াময়। 


৭১ নং আয়াত: বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে হুশিয়ারী। 

—------------------------------------------------------------------------------------

(৭১) তরা তো তোমার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে চাইলে, তারা তো পূর্বে আল্লাহর সঙ্গেও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে; অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর শক্তিশালী করেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আলীমুল হাকীম।)

—------------------------------------------------------------------------------------

  • কিছু যুদ্ধবন্দী মুক্তি লাভের পর তাদের প্রতি যে দয়া প্রদর্শন করা হয় তার অপব্যবহার করে। 

  • এরা  আল্লাহ ও নবী (সঃ) এর সাথে  বিশ্বাসঘাতকতা করে। 

  • মহান আল্লাহ এদের উপর নবী (সঃ) কে জয়ী করেন। 

  • আল্লাহ সব জানেন। কারণ তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।


৭২  ও ৭৩  নং আয়াত: মক্কার মুসলিম. মোহাজের ও আনসার।  

—------------------------------------------------------------------------------------

(৭২) যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, নিজেদের জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করে নাই; হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তোমাদের নাই; আর দ্বীন সম্বন্ধে যদি তারা তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করে তবে তাদেরকে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য, কিন্তু  যে সম্প্রদায় ও তোমাদের মধ্যে চুক্তি আছে তাদের বিরুদ্ধে নয়। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

—------------------------------------------------------------------------------------

(৭৩) যারা কুফরী করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, যদি তোমরা তা না কর তবে দেশে ফিতনা ও মহা বিপর্যয় দেখা দিবে। 

—------------------------------------------------------------------------------------


  • চার  শ্রেণীর লোকের পরিচয় বলা হয়েছে । মোহাজের, আনসার, হিজরত না করা মুসলিম ও কাফির। 

(ক) মোহাজেরদের পরিচয়:

  1. আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সঃ) এর উপর ঈমান এনেছে। 

  2. মদীনায় হিজরত করেছে। 

  3. ঈমান রক্ষার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করেছে। 

  4. তাদের জন্মভূমি, বাড়ী-ঘর, সম্পদ সব কিছু ত্যাগ করে স্ব-ইচ্ছায় নির্বাসিত জীবন বেছে নিয়েছে।   

(খ) আনসারদের  পরিচয়:

  1. তারা মোহাজিরদের আশ্রয় দান করেন। 

  2. তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা দান করেন। 

  3. মোহাজেরদের সাথে আনসারীরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

  4. নিজেদের সহায় সম্পদ আপন আত্মীয়ের মতন তাদের সাথে ভাগ করে নেন। 

(গ) হিজরত না করা মুসলিমদের পরিচয়। 

  1. তারা মোহাজেরদের মত আত্মত্যাগে প্রস্তুত ছিল না। 

  2. তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য কাফিরদের অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়। 

  3. তারা ঈমানদার হওয় সত্বেও তাদের প্রতি রসুল (সঃ) এর কোন দায়িত্ব নেই। 

  4. ধর্ম রক্ষার জন্য তারা হিজরত করে নি। 

  5. তবে তারা যদি ধর্ম রক্ষার জন্য সাহায্য কামনা করে তবে শর্তাধীনে তাদেরকে সাহায্য করা কর্তব্য।

  6. সাহায্য তাদের বিরুদ্ধে করা যাবে না যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে আছে।  

(ঘ) অবিশ্বাসী বা কাফের । 

  1. যারা অবিশ্বাসী তারা পরস্পরের রক্ষাকর্তা।

  2. তারা পরস্পরের সাহায্যকারী ও বন্ধু।

  3. এরাই পৃথিবীতে নিপীড়ন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে।  

  • আল্লাহর সতর্কবাণী । কাফিররা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। মুসলমানরা পরস্পর যদি গভীর সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়  তবে অরাজকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। 


৭৪ নং আয়াত : প্রকৃত মুমিন। 

—------------------------------------------------------------------------------------

(৭৪) যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন; তাদের জন্য ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা রয়েছে। 

—------------------------------------------------------------------------------------

  • প্রকৃত মুমিনের পরিচয়: 

  1. ঈমান এনছে। 

  2. দ্বীনের জন্য দেশ ত্যাগ করেছে। 

  3. আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। 

  4. মুমিণদের  যারা সাহায্য করেছে। 

  5. আশ্রয় দান করেছে। 

  6. যাদের জন্য আল্লাহ বরাদ্দ করেছেন ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। 


(৭৫) নং আয়াত: আরেক শ্রেণীর মোহাজের ও উত্তরাধিকার আইনের মূল নীতি। 

—------------------------------------------------------------------------------------

(৭৫) যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও তোমাদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছে তারাও তোমাদের অন্তর্ভূক্ত এবং আত্মীয়গণ আল্লাহর বিধানে একে অন্য অপেক্ষা অধিক হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। 

—------------------------------------------------------------------------------------

  • এই আয়াতে আরেক  শ্রেণীর মোহাজেরদের (হুদায়বিয়া সন্ধি চুক্তি)  কথা বলা হয়েছে । যারা ঈমান এনেছে হিজরত এবং জিহাদ করেছে। 

  • উত্তরাধিকার  আইন সম্পর্কে বলেছে। নিকট আত্মীয়দের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকার করার বিধান দেয়া হয়। 


বি. দ্র: এর পূর্বে মোহাজির ও আনসারদের মধ্যে  ভ্রাতৃত্ব ও মিত্রতার ভিত্তিতে উত্তরাধিকার হতে পারতেন। এই আয়াতে তা রহিত করা হয়। উত্তরাধিকার শুধু তারাই হতে পারবেন যারা রক্ত সম্পর্ক এবং বৈবাহিক  সূত্রে নিকটাত্মীয় হবেন।  


 অনুধাবন : 
  • ইসলামে বিশ্বাস রক্ষার গুরুত্ব  অনেক বেশী। অমুসলিমদের সাথে চুক্তি করার পর নিজ মুসলিম ভাইকে সাহায্য করবার জন্য চুক্তির শর্ত  ভঙ্গ করা আল্লাহ বৈধ করেন নি। 
  • পাপী ও দুর্নীতি পরায়ণ লোকেরা পরস্পরের বন্ধু ও সাহায্যকারী। তারা সম্মিলিত ভাবে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে। এরাই পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও ফিতনার সৃষ্টি করে। 
  • সৎ ও বিবেকবান ব্যক্তিদের শুধু নিজেদের ভালো থাকা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে হবে না। সংগঠিত ভাবে  তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। 
  • আল্লাহর বিধানে নিকট  আত্মীয়গণ অধিক হকদার। 
সংক্ষেপে: 

 

আয়াত অনুযায়ী প্রধান আলোচ্য বিষয়: 

১. বদর যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ কারীদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে নেয়ামত দানের প্রতিশ্রুতি। (৭০, ৭১)

 

২. ৭২ থেকে ৭৫ নং আয়াতে মদীনায় হিজরত করাকে মানদন্ড ধরে সাহাবাদের শ্রেণী বিভাগ এবং     উত্তরাধিকারের মূল নীতি  

(ক)   মোহাজেরদের  পরিচয়

হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তির উপর ভিত্তি করে দুটি পর্যায়

                                প্রাথমিক পর্যায়:

(i)       আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সঃ)এর উপর ঈমান এনেছে এবং 

মদীনায় হিজরত করেছে।

(ii)      ঈমান রক্ষার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করেছে। 

(iii)     তাদের জন্মভূমি, বাড়ী-ঘর, সম্পদ সব কিছু ত্যাগ করে স্ব-ইচ্ছায় নির্বাসিত       জীবন বেছে নিয়েছে।  

দ্বিতীয় পর্যায়:

যারা ঈমান এনেছে, পরে হিজরত (হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি)এবং জিহাদ করেছে।

(i)           হিজরত করায় মোহাজির ও আনসারদের সম-মর্যাদা পাবে

(ii)          মোহাজির আত্মীয়দের ওয়ারিশ হতে পারবে

(খ) আনসারদের  পরিচয়:

(i)     মোহাজিরদের আশ্রয় দান করেন। 

(ii)    তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সব ধরণের সাহায্য দান করেন। 

(iii)    মোহাজিরদের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন।

(iv)    নিজেদের সহায় সম্পদ আপন আত্মীয়ের মতন তাদের সাথে ভাগ করে   নেন। 

(গ) হিজরত না করা মুসলিমদের পরিচয়। 

(i)  তারা মোহাজেরদের মত আত্মত্যাগে প্রস্তুত ছিল না। 

(ii) তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য কাফিরদের অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়। 

(iii) ঈমানদার হওয় সত্বেও তাদের প্রতি রসুল (সঃ) এর কোন দায়িত্ব নেই। 

(iv) ধর্ম রক্ষার জন্য হিজরত করে নি। 

(v) তারা যদি ধর্ম রক্ষার জন্য সাহায্য কামনা করে তবে শর্তাধীনে তাদেরকে সাহায্য করা কর্তব্য।

(vi) তবে সাহায্য তাদের বিরুদ্ধে করা যাবে না যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে আছে।  

(ঘ) প্রকৃত মুমিনের পরিচয়: 

(i)  ঈমান এনেছে। 

(ii) দ্বীনের জন্য দেশ ত্যাগ করেছে। 

(iii) আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। 

(iv) মুমিণদের যারা সাহায্য ও আশ্রয় দান করেছে। 

(v) যাদের জন্য আল্লাহ বরাদ্দ করেছেন ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। 

(ঙ) অবিশ্বাসী বা কাফের । 

(i)  যারা অবিশ্বাসী তারা পরস্পরের রক্ষাকর্তা।

(ii) তারা পরস্পরের সাহায্যকারী ও বন্ধ

(iii) এরাই পৃথিবীতে নিপীড়ন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে।  

 

৩ আল্লাহর গুণাবলী ও সতর্কবাণী ।

মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুতিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা এবং অবহিত

মহান আল্লাহ মুসলমানদের সতর্ক করেছেন কাফিররা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তারা পরস্পর যদি গভীর সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়  তবে অরাজকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। 

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url