সূরা আনফাল। রুকু ৮ ।সন্ধি করার অনুমতি ।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা আনফাল । রুকু - ৮
আয়াত ৫৯-৬৪
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
এর আগে ৫৮ নং আয়াতে বলা হয়েছিল শত্রুপক্ষের বিশ্বাসঘাতকতার লক্ষণ দেখা দিলে চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে।
৫৯ নং আয়াত: কাফিরদের সাথে চুক্তিভঙ্গর বিধান।
----------------------------------------------------------------------------------------
সন্ধি এমনভাবে হবে যেন কাফিররা মনে না করে তারা চিরদিনের জন্য পার পেয়ে গেছে।
তারা চিন্তা করবে আবার শক্তি সঞ্চয় করে মুসলিমদের হতবল করে দেবে।
এ ধরণের ধারণা যাতে কাফেরদের মনে সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বি,দ্র: সে সব কাফেরদের ইশারা করা হয়েছে যারা বদরের যুদ্ধে পলায়ন করেছিল।
৬০ নং আয়াত: সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য আল্লাহর নির্দেশ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬০) তোমরা তাহাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখিবে- এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করিবে আল্লাহর শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাহাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাহাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যাহা কিছু ব্যয় করিবে উহার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হইবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হইবে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে নবীজি (সঃ) ও মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছেন সমর শক্তি ও অশ্ব বাহিনী সদা প্রস্তুত রাখত।
সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
যাতে শত্রুরা ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকবে।
তাদের মাথায় মুসলিমতের আক্রমণ করার কথা চিন্তাও করবে না।
তিন রকম শত্রুর কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর শত্রু, বর্তমানে নিজেদের শত্রু ও অপ্রকাশ্য শত্রু।
মুসলিমরা তাদের অপ্রকাশ্য শত্রু সম্পর্কে জানে না কিন্তু মহান আল্লাহ জানেন।
আল্লাহ আশ্বস্ত করছেন, আল্লাহর পথে যা ব্যয় করা হবে (এখানে আত্মরক্ষার জন্য যে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করা )তার পূর্ণ প্রতিদান পাওয়া যাবে।
তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
৬১ নং আয়াত: সন্ধি করার অনুমতি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬১)তাহারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকিবে এবং আল্লাহর উপর নির্ভর করিবে; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কাফেররা সন্ধি করতে চাইলে মহান আল্লাহ মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার শর্তে সন্ধি করতে অনুমতি দিয়েছেন।
আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হবে।
আল্লাহ সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞ।
৬২ নং আয়াত: আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬২) যদি তাহারা তোমাকে প্রতারিত করিত চায় তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করিয়াছেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নবীজিকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলছেন,
তারা প্রতারিত করতে চাইতে পারে।
আল্লাহ আশ্বস্ত করছেন আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট।
আল্লাহ নবী (সঃ) কে নিজের সাহায্য এবং মুমিনদের দিয়ে শক্তিশালী করেছেন।
৬৩ নং আয়াত: শত্রুদের সাথে প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৩) এবং তিনি উহাদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করিয়াছেন। পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করিলেও তুমি তাহাদের হৃদয় প্রীতি স্থাপন করিতে পারিতে না; কিন্তু আল্লাহ তাহাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করিয়াছেন; নিশ্চয়েই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ পরস্পর দ্বন্দে লিপ্ত দুটো দলের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করেন।
আল্লাহ সহায়তা না করলে মানুষের পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্ব পার্থিব যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করেও সম্ভব নয়।
একমাত্র আল্লাহ পারেন পরস্পরের মধ্যে প্রীতি সঞ্চার করতে।
তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় ।
৬৪ নং আয়াত : আল্লাহর আশ্বাস।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৪) হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- মহান আল্লাহ নবী (সঃ) ও মুমিনদের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
- তাই জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে, সর্ব অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।
আমার অনুধাবন:
আল্লাহ ঝুঁকি নিয়ে হলেও নবী (সঃ)কে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে বলেছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার আবেদন সব যুগেই প্রযোজ্য। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বিশ্বানঘাতকতার ঝুঁকি থাকে। বর্তমান যুগেও তাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ যেমন নবী (সঃ)কে সাহায়্য করেছিলেন তেমনি মুমিন বান্দাদের সব সময় সাহায্য করেন।
মহান আল্লাহ কাফিরদের অর্থ্যাৎ অমুসলিমদের সাথে সন্ধি চুক্তি করার অনুমতি দিয়েছেন। এখানে শিক্ষণীয় এই যে, সন্ধি করলে মানুষের সাথে শত্রুতা কমে এবং পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে সহজে তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছান যায়।
সব মুসলিম জাতিকে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসলামকে রক্ষার জন্য যে ব্যয় করা হবে তার পূর্ণ প্রতিদান মহান আল্লাহ দেবেন।
মহান আল্লাহ কাফেরদের মোকাবেলায় ‘যথাযথ শক্তি প্রয়োগ করতে বলেছেন। যথাযথ শক্তি অর্থ সামরিক শক্তি। সে সময় তীর, বর্শা ইত্যাদি ছিল বর্তমানে তা ক্ষেপনাস্ত্র, রকেট ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই যথাযথ শক্তি বলতে আমার উপলব্ধি যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে যুগোপযোগী সমরাস্ত্র ব্যবহার। অর্থ্যাৎ যখন যে ধরণের প্রতিরক্ষা শক্তি কাজে আসে মুসলিমদের সে রকম শক্তি অর্জন করা কর্তব্য।
মুসলমানদের জাতীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব দিকের উন্নয়নের জন্য যুগপোযোগী যে সব জ্ঞান ও উপকরণ দরকার হয় তা ব্যবহার করা প্রয়োজন। যদি তা করা যায় তবে আল্লহর শত্রু, বর্তমানে নিজেদের শত্রু এবং অজানা শত্রুদের সন্ত্রস্থ করে রাখা যায়।