সূরা বাকারা। রুকু -১২।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 

সূরা বাকারা । রুকু -১২ 

আয়াত  ৯৭-১০৩ 

কিতাবী লোকদের সম্পর্কে আলোচনা।

নবী(সঃ) এর সাথে ইহুদীদের শত্রুতা। 

আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়। 


৯৭ নং আয়াত: কুরআন। 
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৭) বল, ‘যে কেহ জিবরীলের শত্রু এইজন্য যে, সে আল্লাহর নির্দেশে তোমার হৃদয়ে কুরআন পৌঁছাইয়া দিয়াছে, যাহা উহার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যাহা মুমিণদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ- 
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • ইহুদীরা জীবরীল (আঃ)কে শত্রু মনে করত। 
  • কারণ সে আল্লাহর নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে কুরআন পৌঁছিয়েছে। 
  • এই কুর্রআনের দুটি বৈশিষ্ট্য::
      1. কুরআন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের সমর্থক।
      2. বিশ্বাসীদের জন্য পথ প্রদর্শক ও সুসংবাদ দাতা। 
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৮) ‘যে কেহ আল্লাহর, তাঁহার ফিরিশতাদের, তাঁহার রাসুলগণের এবং জিবরীল ও মীকাঈলের শত্রু সে জানিয়া রাখুক, আল্লাহ নিশ্চয়ই কাফিরদের শত্রু। 
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • যারা আল্লাহর শত্রু, ফিরিশতাদের শত্রু, রাসুলদের শত্রু, জিবরীল ও মীকাইল (আঃ) এর শত্রু তারা কাফির। 
  • আল্লাহতায়ালা কাফিরদের শত্রু। 
৯৯নং আয়াত: নবুয়্যতের প্রমাণ। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৯৯) এবং নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি স্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করিয়াছি। ফাসিকরা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা প্রত্যাখান করে না।

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • রসুল (সঃ) এর প্রতি স্পষ্ট আয়াত নাযিল করা হয়েছে। 
  • যে সব আয়াতে পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া আছে। 
  • ফাসিক অর্থ্যাত্‌ আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীরা ছাড়া এই আয়াতকে কেউ অস্বীকার করে না। 

 ১০০  ও ১০১ নং আয়াত : অঙ্গীকার ভঙ্গকারী । 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০০) তবে কি যখনই তাহারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হইয়াছে তখনই তাহাদের কোন একদল তাহা ভঙ্গ করিয়াছে? বরং তাহাদের অধিকাংশ বিশ্বাস করে না। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০১) যখন আল্লাহর পক্ষ হইতে তাহাদের নিকট রাসুল আসিল, যে তাহাদের নিকট যাহা রহিয়াছে উহার প্রত্যায়নকারী, তখন যাহাদেরকে কিতাব দেওয়া হেইয়াছিল তাহাদের একদল আল্লাহর কিতাবটিকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করিল, যেন তাহারা জানে না। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  •  ইহুদীরা যতবার ওয়াদা করেছে তাদের মধ্যে একদল আছে যারা ততবার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে।যেমন: হযরত মুহাম্মদ  (সঃ) আবির্ভূত হলে তার উপর ঈমান আনবে। মদিনা সনদে স্বাক্ষর করে
আবার কুরায়েশদের সাথে চুক্তি করে ওয়াদা ভঙ্গ করে। 
  • নবী (সঃ) ও তাওরাতকে সত্যায়নকারী কিতাবকে  তারা অস্বীকার করে। 

  • তারা তাদেরকে দেয়া আল্লাহর কিতাব অর্থ্যাৎ 'তাওরাতকে পিছনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এমন ভান করে যেন তারা কিছুই জানে না যে 
  • তারা আল্লাহর কিতাবকে কিতাব বলে মনে করে না। 
১০২ নং আয়াত: অবিশ্বাসীদের যাদুর প্রতি ভালবাসা।   
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০২)  এবং সুলায়মানের রাজত্বে শয়তানরা যাহা আবৃত্তি করিত তাহারা তাহা অনুসরণ করিত। সুলায়মান কুফরী করে নাই, বরং শয়তানই কুফরী করিয়াছিল। তাহারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত এবং যাহা বাবিল শহরে হারুত ও মারুত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর অবতীর্ণ হইয়াছিল। তাহারা কাহাকেও শিক্ষা দিত না এ্ কথা না বলিয়া যে, ‘আমরা পরীক্ষাস্বরূপ; সুতরাং তুমি কুফরী করিও না।” তাহারা উভয়ের নিকট হইতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যাহা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাহা শিক্ষা করিত, অথচ আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত তাহারা কাহারও কোন ক্ষতি সাধন করিতে পারিত না। তাহারা যাহা শিক্ষা করিত তাহা তাহদের ক্ষতি সাধন করিত এবং কোন উপকারে আসিত না; আর তাহারা নিশ্চিতভাবে জানিত যে, যে উহা ক্রয় করে পরকালে তাহার কোন অংশ নাই। উহা কত নিকৃষ্ট, যাহার বিনিময়ে তাহারা স্বীয় আত্মাকে বিক্রয় করিয়াছে, যদি তাহারা জানিত। 
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৩ ) যদি তাহারা ঈমান আনয়ন করিত ও মুত্তাকী হইত, তবে নিশ্চিতভাবে তাহাদের প্রতিফল আল্লাহর নিকট অধিক কল্যাণকর হইত, যদি তাহারা জানিত। 
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • যাদু-টোনা করা সম্পূর্ণ অবৈধ। 

  • তারপরেও তারা শয়তানের প্ররোচনায় যাদু-টোনার উপর আমল করতে থাকে যা একটি কুফর কাজ। 

  • তারা দাবী করে সুলইমান যাদুটোনা করত। 

  • হযরত সুলায়মান (আঃ) সত্য প্রত্যাখ্যান বা কুফর করেন নি। 

  • মানুষরূপী শয়তান কুফরী করত। 

  • তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত। 

  • তারা এই যাদু বিদ্যা শিখেছিল বাবেল শহরে অবস্থানরত হারুত ও মারুত নামক দুজন  ফেরেশতাদের কাছ থেকে। 

  • হারুত ও মারুতকে পরীক্ষা দেবার জন্য মহান আল্লাহ এই পৃথিবীতে পাঠান। 

  • হারুত ও মারুত তাদের শিখাবার আগে শর্ত দিতেন যে তারা এ বিদ্যা দিয়ে কোন কুফরী করবে না। 

  • কিন্তু অবিশ্বাসীরা কিভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ করা যায় তা শিক্ষা করে। 

  • যাদুতে বিশ্বাসীগণের কুফরী ধারণা ছিল তাদের  যাদু স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে তার কাজ করবেই

  • অথচ আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তারা কারো ক্ষতি সাধন করতে পারত না।

  • তারা এমন জিনিস শেখে যা তাদের ক্ষতি সাধন করে কোন উপকার করে না।  

  • তারা যদিও জানত তাদের এ কাজ পরকালে কোন কাজে আসবেনা, তাদের শাস্তির কারণ হবে -তবুও তারা এ কাজ করত। 

  • তারা নিকৃষ্ট জিনিসের বিনিময়ে নিজেদের আত্মা বিক্রী করে দিয়েছে। 

  • যদি তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি থাকত তবে তারা এ কাজটি করত না। 


আমার অনুধাবন::

  • আল্লাহর গযবের একটি কারণ হচ্ছে নবী ও ফিরিশতাদের সাথে শত্রুতা করা। কারণ এটি হচ্ছে কুফর। সরল ভায়ায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা আর আল্লাহর সাথে শত্রুতা করা একই। 

  •  আল্লাহর কিতাবকে পিছনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভিত্তিহীন অলীক কুসংস্কারের  পিছনে ছোাঁটা অর্থহীন।

  • শয়তান অনেক রকম অলীক কিচ্ছা কাহিনী শুনিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে সেগুলোকেই অনুসরণ করে। যেমন মহান আল্লাহ এই রুকুতে হযরত সুলায়মান (আঃ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে গুজব ছড়ানো হয় তিনি যাদুকর ছিলেন।  অথচ তিনি কখনো কুফরী কাজ করতেন না। 

  • এই পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়া কিছুই হয় না। আল্লাহ যে প্রাকৃতিক নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ হয়। তবে কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে  নিয়মকে আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। 

  • যে  জ্ঞান-বুদ্ধি আমল ও ভবিষ্যত্‌ সম্পর্কে চিন্তা করতে শিখায় না তা অজ্ঞতার শামিল। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url