সূরা বাকারা : রুকু-১১।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সূরা বাকারা । রুকু -১১
আয়াত ৮৭ - ৯৬।
কিতাবী লোকদের সম্পর্কে আলোচনা।
ভূমিকা:
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
৮৭ নং আয়াত: মানুষকে পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর অবিরাম অনুগ্রহ।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৭) এবং নিশ্চয়ই আমি মূসাকে কিতাব দিয়াছি এবং তাহার পরে পর্যায়ক্রমে রাসুলগণকে প্রেরণ করিয়াছি, মারইয়াম-তনয় 'ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়াছি এবং 'পবিত্র আত্মা' দ্বারা তাহাকে শক্তিশালী করিয়াছি। তবে কি যখনই কোন রাসুল তোমাদের নিকট এমন কিছু আনিয়াছে যাহা তোমাদের মনঃপূত নয় তখনই তোমরা অহংকার করিয়াছ আর কতককে অস্বীকার করিয়াছ এবং কতককে হত্যা করিয়াছ?
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ বনী ঈসরাঈলীদের তিরস্কার করেছেন।
মহান আল্লাহ মূসাকে কিতাব দান করেছেন।
এরপরে পর্যায়ক্রমে একে একে আরো রসুল প্রেরণ করেন।
মরিয়ম তনয় হযরত ঈসা (আঃ)কে রাসুল হিসাবে প্রেরণ করেন।
তাঁকে অনেক 'বাইয়েনাত' অর্থ্যাত্ নবুয়্যত পাবার স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছেন।
'পবিত্র আত্মা' দ্বারা শক্তিশালী ও পবিত্র করেছেন।
যখনই আল্লাহ তাদের কাছে নির্দেশ দিয়ে রসুল পাঠিয়েছেন তারা অস্বীকার করেছে।
তাদের পছন্দ হয় নি বলে অহংকার করেছে।
কোন কোন নবীকে প্রতারক বলে অভিহিত করেছে।
আবার অনেক নবীকে হত্যা করেছে।
৮৮ নং আয়াত: মূসা (আঃ) ও তাওরাতের বিধানের প্রতি ইহুদীদের বিদ্বেষ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৮) তাহারা বলিয়াছিল, 'আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত', বরং কুফরীর জন্য আল্লাহ তাহাদেরকে লানত করিয়াছেন। সুতরাং তাহাদের অল্পসংখ্যকই ঈমান আনে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইহুদীরা মনে করত তাদের হৃদয় 'গুলফুন' বা পর্দা দিয়ে আচ্ছাদিত।
তারা মনে করত নবীদের কথায় অন্তরে কথার প্রভাব সৃষ্টি না হওয়া গর্বের ব্যাপার।
আল্লাহ বলছেন,যারা এ ধরণের পর্দার অধিকারী সত্য কথা শোনেও না এবং সত্য কথা বলেও না।
সত্য প্রত্যাখানের জন্য তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসে।
অল্প সংখ্যক ইহুদী ইসলাম গ্রহণ করে।
বি. দ্র: কুফরী - মূল আরবী শব্দ 'কাফারা'। এর অনেক অর্থ আছে। যেমন-
আল্লাহর রহমতকে অস্বীকার করা এবং অকৃতজ্ঞ হওয়া।
ধর্মে বিশ্বাস হারানো এবং প্রত্যাদেশকে আল্লাহর প্রেরিত বাণীরূপে বিশ্বাস না করা।
আল্লাহ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলা। ব্যখ্যা দান করে যা আল্লাহর প্রতি নিন্দারূপে আল্লাহর চোখে পরিগণিত।
৮৯ নং আয়াত: সত্য প্রত্যায়নকারী কিতাব।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৯) তাহাদের নিকট যাহা আছে আল্লাহর নিকট হইতে যখন তাহার প্রত্যায়নকারী কিতাব আসিল; যদিও পূর্বে সত্য প্রত্যখ্যানকারীদের বিরুদ্ধে তাহারা ইহার সাহায্য বিজয় প্রার্থনা করিত, তবু তাহারা যাহা জ্ঞাত ছিল উহা যখন তাহাদের নিকট আসিল তখন তাহারা উহা প্রত্যাখ্যান করিল। সুতরাং কাফিরদের প্রতি আল্লাহর লানত।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইহুদীদের কাছে তাওরাত কিতাব আছে।
তাওরাতের প্রত্যায়নকারী হিসাবে কুরআন অবতীর্ণ হয়।
সত্য প্রত্যখ্যানকারীরা এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত।
শেষ নবীর মর্যাদা ও গুণাবলী তাওরাতে আছে।
শেষ নবী যখন আসলেন তখন তাঁকে তারা প্রত্যখ্যান করল।
সুতরাং কাফিরদের উপর আল্লাহর অভিশাপ।
বি.দ্র. - মুশরিকদের সাথে যখন ইহুদীদের যুদ্ধ হত বা বিতর্ক হত তখন তারা এই বলে দোয়া করত, 'হে আল্লাহ! আপনি তাওরাতে যে শেষ নবীর আগমণের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাঁকে শীঘ্র পাঠিয়ে দিন
৯০ নং আয়াত: কাফেরদের লাঞ্ছনাকর শাস্তি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯০) উহা কত নিকৃষ্ট যাহার বিনিময়ে তাহারা তাহাদের আত্মাকে বিক্রয় করিয়াছে-উহা এই যে, আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন, জিদের বশবর্তী হইয়া তাহারা তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিত শুধু এই কারণে যে, আল্লাহ তাঁহার বান্দাদের মধ্য হইতে যাহাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তাহারা ক্রোধের উপর ক্রোধের পাত্র হইল। কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নিকৃষ্ট বস্তুর বিনিময় তারা আত্মাকে বিক্রয় করে। অর্থ্যাত্ পরকালের পরিবর্তে পৃথিবীর বর্তমান লাভকে বড় করে দেখে।
তারা জিদ ও ঈর্ষার বশর্বতী হয়ে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন অর্থ্যাৎ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নি।
তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে যকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন।
তাদের উপর গযবের উপর আরেক গযব আসে। এক হল কুফরীর কারণে আরেক হিংসা-বিদ্বেষের কারণে।
কাফিরগণ লাঞ্ছনাকর শাস্তির উপযুক্ত।
৯১ নং আয়াত: ইহুদীদের ঈমান না আনার কারণ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯১) এবং যখন তাহাদেরকে বলা হয়, 'আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহাতে ঈমান আনয়ন কর, তাহারা বলে, 'আমাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে আমরা তাহাতে বিশ্বাস করিঅ' অথচ তাহা ব্যতীত সব কিছুই তাহারা প্রত্যাখ্যান করে, যদিও উহা সত্য এবং যাহা তাহাদের আছে তাহার প্রত্যায়নকারী। বল, 'যদি তোমরা মুমিন হইতে তবে কেন তোমরা অতীতে আল্রাহর নবীগণকে হত্যা করিয়াছিলে?
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ যে কালাম অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য ইহুদীদের আহ্বান।
তাদের উত্তর: আমাদের নবীর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে শুধু তাতে বিশ্বাস করি।
তাছাড়া সব আসমানী কিতাব তারা অস্বীকার করে।
আল্লাহ এরশাদ করেছেন সব আসমানী কিতাব সত্য।
নবী (সঃ)কে নির্দেশ দিচ্ছেন জিজ্ঞাসা করতে যদি তাওরা্তই মেনে চল, তবে অতীতে নবীদেরকে কেন হত্যা করেছিল
৯২ নং আয়াত: কুফরী ও অবিশ্বাসের কারণে অন্তরে বাছুরকে স্থান দান।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯২) এবং নিশ্চয়ই মূসা তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছে, তাহার পরে তোমরা গো বত্সকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করিয়াছিলে । আর তোমরা তো জালিম।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তাঁর স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছেন।
মূসা (আঃ) যখন তূর পাহাড়ে যান তখন গো বৎস বানিয়ে পূজা শুরু করে।
শিরক যে করে সে হচ্ছে জালিম।
৯৩ নং আয়াত: গো-বৎস প্রীতি।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৩) স্মরণ কর, যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়াছিলাম এবং তূরকে তোমাদের উর্ধে উত্তোলন করিয়াছিলাম, বলিয়াছিলাম, 'যাহা দিলাম দৃঢ়রূপে গ্রহণ কর এবং শ্রবণ কর।' তাহারা বলিয়াছিল, 'আমরা শ্রবণ করিলাম ও অমান্য করিলাম। কুফরী হেতু তাহাদের হৃদয়ে গো-বৎস প্রীতি সিঞ্চিত হইয়াছিল। বল, 'যদি তোমরা ঈমানদার হও , তবে তোমাদের ঈমান যাহার নির্দেশ দেয় উহা কত নিকৃষ্ট।'
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন তাওরাতের আহকাম মোতাবেক আমল করার।
তুর পাহাড়কে তাদের মাথার উপর উত্তোলন করেছিলেন।
আল্লাহ যে কিতাব দিয়েছেন তা মেনে চলবে এবং শুনবে।
তারা উত্তরে বলল: আমরা শ্রবণ করেছি এবং অমান্য করলাম।
কারণ তাদের কুফরের কারণে তাদের অন্তরে গোবৎস প্রীতি সিঞ্চিত হয়ে ছিল।
৯৪ নং ৯৫ আয়াত: ইহুদীদের মিথ্যা ধারণা।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৪) বল, ;যদি আল্লাহর নিকট আখিরাতের বাসস্থান অন্য লোক ব্যতীত বিশেষভাবে শুধু তোমাদের জন্যই হয় তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর-যদি তোমরা সত্যবাদী হও ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৫) কিন্তু তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহারা কখনও উহা কামনা করিবে না এবং আল্লাহ জালিমদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বনী ঈসরাঈলীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলছেন:
ইহুদীরা বিশ্বাস করত আখিরাতে বাসস্থান একমাত্র তাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
অন্য লোকেরা এখানে জায়গা পাবে না।
আল্লাহ তাদের প্রশ্ন করেছেন তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে মৃত্যু কামনা করছ না কেন?
আল্লাহ নিজেই তার উত্তর দিচ্ছেন তারা তা কখনোই করবে না্
কারণ তারা জালিম।
আল্লাহ তাদের সীমালংঘন সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
৯৬ নং আয়াত: দীর্ঘ আয়ু।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৬) তুমি নিশ্চয় তাহাদেরকে জীবনের প্রতি সমস্ত মানুষ, এমন কি মুশরিক অপেক্ষাও অধিক লোভী দেখিতে পাইবে। তাহাদের প্রত্যেকে আকাংখা করে যদি সহস্র বৎসর আয়ু দেওয়া হইত; কিন্তু দীর্ঘায়ু তাহাকে শাস্তি হইতে দূরে রাখিতে পারিবে না। তাহারা যাহা করে আল্লাহ তা দেখেন।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বাস্তবে তারা অন্য লোক এমনকি মুশরিকদের চাইতে বেশী দীর্ঘজীবন কামনা করে।
তারা হাজার বছর আয়ু কামনা করে।
তারা মনে করে আয়ু বৃদ্ধি পেলে শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।
তারা যা কিছুই করে আল্লাহ তা ভালভাবে দেখেন।
আমার অনুধাবন:
অহংকার একটি খারাপ রিপু যা মানুষকে সত্যকে দেখতে, অনুভব করতে এবং গ্রহণ করতে বাধা দেয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়, যখনই একটি সমাজ নানারকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে তখনই মহান আল্লাহ মানুষের মুক্তি এবং সমাজে সংস্কারের জন্য নবী-রসুল পাঠিয়ে থাকেন। নবী বা রসুলরদের দেখা যায় তারা সাধারণত সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, অনাচার, অপরাধ, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষা, মানবাধিকার লংঘন - এসব নিয়ে কথা বলেন। তারা দুনিয়া পূজা ও আত্ম পূজার বিরোধিতা করেন। স্বভাবতই এই দুনিয়া ও আত্ম পূজারীরা তাদের চিরচরিত নিয়ম অনুযায়ী নবী রসুলদের বিরোধিতা করে।
মানুষের প্রকৃত ঈমানের পরিচয় পাওয়া যায় তারা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে কিনা তা থেকে। যারা ব্যক্তিস্বার্থ ও পছন্দ অনুযায়ী কাজ করে তারা কখনোই প্রকৃত ঈমানদার নয়।
নবীদের বক্তব্য কারো কাছে দুর্বোধ্য নয়। তাদের গোয়ার্তুমি ও সত্যকে ঢাকা দেবার চেতনার কারণে একদল সত্যকে বুঝতে চা্য় না। যা বর্তমান যুগেও দেখা যায়। মানুষের উচিত আল্লাহর সব বিধান মেনে নেয়া্ । আমার পছন্দনীয় বিধান মানব আর অপছন্দনীয় বিধান মানব না তা হতে পারে না। আল্লাহর আনুগত্যের পরিবর্তে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করা চলবে না।
সত্যত্যগী হয়ে ইহুদীদরে মত আল্লাহর অভিশাপের পাত্র হওয়া যাবে না।
মানুষের শুধু জ্ঞান থাকলেই হয় না। তার সাথে সত্যকে গ্রহণ ও তা মেনে চলার মনোভাবও থাকা প্রয়োজন।
বিশ্বাস রাখতে হবে সব আসমানী কিতাব এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে এবং সব মানুষের জন্য। সব আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। ইহুদীদের মত আল্লাহর কিতাব প্রত্যখ্যান করা যাবে না।
আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোন কিছুর প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি বিপজ্জনক। এ ধরণের ভক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে বিমুখ করে দেয়।
দুনিয়ার জীবনের প্রতি মহব্বত ত্যাগ করতে হবে।