সূরা আনফাল। রুকু ৭।

 কুরআন পড়ুন,  বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।

সূরা আনফাল । রুকু - ৭।

আয়াত ৪৯ - ৫৮  

  কাফেরদের শাস্তি ও উহার কারণ। 


আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়: 


৪৯ নং আয়াত: আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার কল্যাণ। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৯) স্মরণ কর, মুনাফিক ও যাহাদের অন্তরে ব্যধি আছে তাহারা বলে, ‘ইহাদের দ্বীন ইহাদেরকে বিভ্রান্ত করিয়াছে।’ কেহ আল্লাহর উপর নির্ভর করিলে আল্লাহ তো পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

প্রেক্ষিত:  মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করা দুই শ্রেণীর দুর্বল মানুষ ছিল যারা ছিল  মুনাফিক এবং আরেক শ্রেণী ’যাদের  অন্তরে ব্যাধি’  অর্থ্যাৎ তারা  ছিল দোদুল্যমান চিত্ত মুসলমান। এরা দুর্বলতার কারণে হিজরত করতে পারেনি।   বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধর ময়দানে এসে যখন দেখে মুসলমালমানদের সংখ্যা কম , তখন তারা মনে করে::

  • মুসলিমদের দ্বীন তাদেরকে ধোঁকা দিয়েছে, তারা কিছুতে বিজয় লাভ করতে পারবে না। 

  • তাই তারা ধর্মত্যাগী হয়ে যায়। 

  • আল্লাহ এরশাদ করছেন, যারা আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তিনি তাদের সাহায্য করেন।

  • কারণ আল্লাহ পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়। (আযীয়ুল হাকিম) 


৫০ নং আয়াত: কাফিরদের  শাস্তি। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫০) তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফিরিশতাগণ কাফিরদের  মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে  এবং বলিতেছে, ‘তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর। ‘ 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • জান কবয করার সময় ফিরিশতাগণ কাফিরদের  মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে। 

  • ফিরিশতারা বলতে থাকে তোমরা আগুনে পোড়ার যন্ত্রণা ভোগ কর। 

৫১ নং আয়াত: কাফেরদের কর্মফল।  

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫১) ইহা তাহা, তোমাদের হস্ত যাহা পূর্বে  প্রেরণ করিয়াছিল, আল্লাহ তো তাহার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • এই শাস্তি কাফেরদের করা কুফরী কাজের জন্য যা তারা স্বহস্তে করেছিল্ ।

  • আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী  নন। 

  • আল্লাহ  বিনা দোষে কাউকে শাস্তি দেন না। 


৫২ নং আয়াত:  আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যানে শাস্তি দান। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫২) ফিরআউনের স্বজন ও উহাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান (কাফারু) করে; সুতরাং আল্লাহ ইহাদের পাপের জন্য ইহাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর। 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কাফিরদের কুফর ও অবাধ্যতা ফিরাউন সম্প্রদায় ও পূর্ববর্তী কাফির লোকদের মত। 

  • তারা যেমন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশসমূহ প্রত্যখ্যান করত কাফেররাও তাই করে। 

  • আল্লাহ তাদের ওই পাপের জন্য বিভিন্নভাবে  শাস্তি দেন। 

  • কারণ  আল্লাহ শক্তিমান ও শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। 


৫৩ নং আয়াত: আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। 

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৩)  ইহা এজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি উহাদেরকে যে সম্পদ দান করিয়াছেন, উহা পরিবর্তন করিবেন; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ কোন জাতিকে যদি নেয়ামত দান করেন তা তিনি পরিবর্তন করেন  না। 

  • মানুষ নিজেরাই  তাদের কার্যকলাপের দ্বারা নেয়ামতের পরিবর্তন করে। 

  • আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। 


৫৪ নং আয়াত: আল্লাহ সত্যকে  মিথ্যা মনে করায় ধ্বংস করেন। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৪) ফিরআউনের স্বজন ও তাহাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের  ন্যায় ইহারা ইহাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ( কায্যাবু) করেছিল। তাহাদের পাপের জন্য আমি তাহাদেরকে ধ্বংস করিয়াছি এবং ফিরইউনের স্বজনকে নিমজ্জিত করিয়াছি এবং তাহারা সকলেই ছিল জালিম। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • ফিরআউনের স্বজন এবং তার পূর্ববর্তীদের স্বভাব অনুযায়ী আল্লাহর নিদর্শনকে মিথ্যা মনে করে।

  • তাদের পাপের জন্য আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। 

  • ফিরাউনকে তার স্বজন সহ পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়। 

  • তারা সবাই জালিম ছিল। 

৫৫ নং আয়াত: নিকৃষ্ট জীব কারা? 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ 

(৫৫) আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তাহারাই যাহারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • নিকৃষ্ট জীব তারা যারা কুফরী কাজ করে। 

  • আল্লাহর উপর ঈমান আনে না। 

  • অর্থ্যাৎ এরা কাফের ও ঈমানহীন যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে। 

বি. দ্র: এর আগে ২২ নং আয়াতে বলা হয়েছে তারাই নিকৃষ্ট জীব যারা মূক ও বধির। তারা আল্লাহ প্রদত্ত মানসিক দক্ষতা যেমন - শোনার, বলার,  বুঝা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা ইত্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যবহার করে না। তারা তাদের মেধা-মনন সব কিছু নিয়োজিত করে মন্দ কাজে পার্থিব সম্পদ লাভের আশায়। 


৫৬ নং আয়াত: চুক্তি  ভঙ্গকারী বা বিশ্বাস ঘাতকতা। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উহাদের মধ্যে তুমি যাহাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ, তাহারা প্রত্যেকবার তাহাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তাহারা সাবধান হয় না। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মুসলমানদের সাথে বারবার চুক্তি ভঙ্গ করে। 

  • যেহেতু তারা আল্লাহকে ভয় পায় না তাই তারা সাবধান হয় না। 

  • এদের সাথে চুক্তি করা বা না করা একই কথা ।


৫৭ নং আয়াত:  চুক্তি ভঙ্গকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নির্দেশ। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৭) যুদ্ধে উহাদেরকে তোমরা যদি তোমাদের আয়ত্তে পাও তবে উহাদেরকে উহাদের পশ্চাতে যাহারা আছে, তাহাদের হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া এমনভাবে বিধ্বস্ত করিবে, যাহাতে উহারা শিক্ষা লাভ করে।

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • শাস্তি দেয়ার আগে তাদের মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। 

  • মেনভাবে ধ্বংস করতে হবে যাতে তাদের দেখে অন্যান্য চুক্তি ভঙ্গকারীরা ভয় পায় ও শিক্ষা লাভ করে। 

৫৮ নং আয়াত: চুক্তি বাতিলের নির্দেশ

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৮) যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের চুক্তিভঙ্গের আশংকা কর তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথ বাতিল করিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদেরকে পছন্দ করেন না।   —----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • চুক্তি ভঙ্গ করার আশংকা হলে তা বাতিল করে দিতে হবে। 

  • আল্লাহ চুক্তিভঙ্গকারীকে একদম পছন্দ করেন না। 


আমার অনুধাবন:

  • মহান আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত এবং প্রজ্ঞাময়। সুতরাং তাঁর উপর নির্ভর করে যে যুদ্ধ করবে তার বিজয় সুনিশ্চিত। বদরেরর যুদ্ধ তার বাস্তব উদাহরণ।

  • মুমিন মুসলমানরা অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যর বিরুদ্ধে রুখে দাাঁড়ায় তবে আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন। 

  • যারা অল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে  তাদেরকে আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। তিনি এত শক্তিমান যে এমন কোন শক্তি নেই  তাঁকে প্রতিহত করতে পারে।  

  • মানুষকে দেয়া আল্লাহর নেয়ামত অশেষ এবং অফুরন্ত। তা কোন শর্তের অধীনে নয়।  মানুষ তার নিজস্ব নিয়্যত ও কার্যকলাপ দ্বারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।  যেমন  সে যদি অকৃতজ্ঞ হয়, দম্ভভরে যমীনে চলাফেরা করে , অন্যায় আচরণ করে  তখন তার  কর্মের কারণেই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। 

  • আরেকটি উদাহরণ : মক্কার কাফেরদের সব ধরণের নিয়ামত আল্লাহ দান করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়মত হল শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আবির্ভাব হওয়া। কিন্তু তারা তাদের প্রদত্ত নেয়ামতকে অবহেলা করে। ফলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে এবং নেয়ামত আযাবে পরিণত হয়।  

  • এই রুকুর ৫২ নং আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে আল্লাহর নিদর্শনকে  প্রত্যাখ্যান করলে শাস্তি দেয়া হবে। ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে নিদর্শনকে ‘মিথ্যা’ মনে করলে তাকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। অর্থ্যাৎ দেখা যাচ্ছে  ‘মিথ্যা’ মনে করা ‘প্রত্যাখানের’ চেয়ে বড় পাপ। শাস্তির পরিমণও বেশী। 

  • যারা বার বার চুক্তি ভঙ্গ করে তারা বিশ্বাস ঘাতকতা করে। বিশেষ করে যুুদ্ধের সময়। এসময় এরকম বিশ্বাস ঘাতকতা যোদ্ধা ও নিরীহ জনগণের জীবন ও সম্পদের আশঙ্কার কারণ হয়।   


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url