সূরা আনফাল । রুকু -৫।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সূরা আনফাল ।রুকু- ৫।
আয়াত :৩৮- ৪৪।
বদর যুদ্ধ- নবীর সত্যতার নিদর্শন।
৩৮ নং আয়াত: মুজাহিদদের জেহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৮). যারা কুফর করেছে তাদেরকে বলো, যদি তারা বিরত হয় , তাদেরকে তা ক্ষমা করে দেয়া হবে , ইতিমধ্যে যা অতীত হবে, ইতিমধ্যে যা অতীত হয়েছে, আর তারা যদি পুণরায় করে, তাহলে তো পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অতীত হয়েছেই।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
রসুল (সঃ)কে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ সত্যপ্রত্যখ্যানকারীদের বলতে বলছেন ::
এখনও সময় আছে যাতে তারা সত্য ধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করা থেকে বিরত হয়।
যদি বিরত থাকে তবে আল্লাহ তাদের আগের সব পাপ মার্জনা করে দেবেন।
কিন্তু যদি তারা অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি করে তবে পূর্ববর্তী অবাধ্যদের উপর যেরকম শাস্তি নেমে এসেছিল সেরকম শাস্তি দেয়া হবে।
৩৯ ও ৪০ নং আয়াত: জিহাদের সময়সীমা।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৯) আর তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাক যতক্ষন না ফিতনা থাকে এবং দ্বীন সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা, যা তারা করে।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৪০) আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে জেনে রখ যে, আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক। কতই না উত্তম অভিভাবক আর কতই না উত্তম সাহায্যকারী।
—---------------------------------------------------------------------------------------------
ততক্ষন পর্যন্ত সংগ্রাম করতে বলা হয়েছে যতক্ষণ ফিতনা বা বিশৃংখলা দূর হয় এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়
যদি অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসী হয় কিংবা আনুগত্য স্বীকার করে তবে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে হবে।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সম্যক দ্রষ্টা।
কেউ যদি আদর্শ গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিতে দোদুল্যমান হয় হয় তাদের দেখে মুমিনরা যেন সন্দিহান না হয়।
কারণ মহান আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।
বি. দ্র: কতিপয় সাহাবীদের বর্ণনা সূত্রে সাফওয়ান বিন সালিম উল্লেখ করেছেন, রসুল (সঃ) বলেছেন, "ভালো করে শুনে নাও, যে লোক জিম্মিদের প্রতি অত্যাচার করব, তাদের প্রাপ্য পুরোপুরি পূরণ করবে না, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু গ্রহণ করবে অথবা তাদের উপর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা অর্পণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব" - আবু দাউদ। (মাযহারী)
৪১ নং আয়াত: যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ বন্টনের নিয়ম।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৪১) আর জেনে রাখ, তোমরা যা কিছু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করেছ তবে অবশ্যই তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য ও রসুলের জন্য এবং তার নিকট আত্মীয়দের ও এতিমদেরও মিসকীনদের এবং পথিকদের জন্য। যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহর এবং সেটার প্রতি যা আমরা আমোদের বান্দার ওপর অবতীর্ণ করেছি, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যর দিন, যেদিন দুদল মুখোমুখি হয়েছিল। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর রাসুলের , তাঁর আত্মীয়-স্বজন এবং এতিম ,মিসকীন ও পথিকদের জন্য।
বদরের যুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। কারণ এই দিন 'ফুরকান' বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধিারণের দিন। এই দিন মুমিন ও কাফিরদের ভাগ্যের মীমাংসা করা হয়েছিল।
আল্লাহ ও তাঁর প্রত্যাদেশের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
৪২ নং আয়াত: যুদ্ধে মুসলিম ও মুশরিক বাহিনীর অবস্থান।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৪২) স্মরণ কর, তোমরা ছিলে উপত্যাকার নিকট-প্রান্তে এবং তাহারা ছিল দূর প্রান্তে আর উষ্ট্রারোহী দল ছিল তোমাদিগের অপেক্ষা নীচ ভূমিতে যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত করিতে চাহিতে তবে এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদিগের মধ্যে মতভেদ ঘটিত; কিন্তু বস্তুত: যাহা ঘটিবারই ছিল আল্লাহ তাহা সম্পন্ন করিবার জন্য উভয় দলকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে সমবেত করিলেন যাহাতে যে-কেহ ধ্বংস হইবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকিবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর জীবিত থাকে, আল্লাহতো সর্ব শ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সামীয়্যুল আলীম)
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
মুসলিম বাহিনীর অবস্থান ছিল উপত্যাকার নিকটবর্তী সীমানায়।
মুশরিক বাহিনীর অবস্থান উপত্যাকার দূরবর্তী সীমানায়।
নিম্নভূমিতে ছিল তাদের উষ্ট্র বাহিনী। (আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য বাহিনী)
মুসলিম বাহিনী পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করেনি। কারণ তাহলে তারা একমত হতে পারত না।
মহান আল্লাহ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উভয় দলকে একত্রিত করেন যাতে মুমিনদের দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়।
তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সত্য স্পষ্ট হোক। অর্থ্যাৎ সত্য জয়ী হোক এবং মিথ্যা পরাজিত হোক।
যর মৃত্যু হবে সে সত্যর সুস্পষ্ট রূপ দেখে মৃত্যুবরণ করবে আর যে জীবিত থাকবে সে সত্যের প্রকৃত রূপ থেকে দেখবে বিশুদ্ধ জীবন।
আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
৪৩ ও ৪৪ নং আয়াত : দ্বীনকে বিজয়ী করার ব্যাপারে আল্লাহর কৌশল।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৪৩) যখন আল্লাহ তোমাকে তোমার স্বপ্নের মধ্যে তাদেরকে কম সংখ্যক দেখালেন। অথচ যদি তিনি তোমাকে তাদেরকে বেশী সংখ্যক দেখাতেন, তোমরা অবশ্যই মনোবল হারিয়ে ফেলতে এবং অবশ্যই ব্যাপারটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়াতে। কিন্তু আল্লাহ নিরাপত্তা দান করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। —-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৪৪) আর যখন তোমরা মুখোমুখি হয়েছিলে তখন তিনি তোমাদের চোখে তাদেরকে কম হিসাবে দেখিয়েছিলেন আর তোমাদেরকেও তাদের চোখে কমিয়ে দিয়েছিলেন, , আল্লাহ এমন বিষয় সম্পন্ন করার জন্য, যা অবধারিত ছিল। আর আল্লাহর দিকেই বিষয়গুলি প্রত্যাবর্তিত হয়।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
মুসলিম বাহিনী আল্লাহর অনুগ্রহে যুদ্ধক্ষেত্রে রাতে ঘুমাতে পারার ফলে তাদের ক্লান্তি ও অবসাদ কেটে যায়।
মহান আল্লাহ রসুল (সঃ)কে স্বপ্নে দেখান শত্রুরা সংখ্যায় কম।
রসুল (সঃ) মুসলমানদের এ কথা বলায় তাদের মনে, আত্মবিশ্বাস, সাহস ও দৃঢ়তা ফিরে আসে।
যদি বেশী সংখ্যায় দেখাতেন তবে মুসলমানরা মনোবল হারিয়ে ফেলত।
নিজেদের মধ্যে মতভেদ ঘটত এবং বিবাদে লিপ্ত হত।
আল্লাহ তা থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন।
আল্লাহ প্রতিটি মানুষের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।
বাস্তবে মুসলিম বাহিনী ও মুশরিক বাহিনী উভয়েই প্রতিপক্ষকে নগণ্য দেখছিল।
মহান আল্লাহ হচ্ছেন যাবতীয় ক্ষমতার উৎস। মানুষ যাই করুকে না কেন সব বিষয় আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
বি.দ্র: বদরের যুদ্ধের সময় অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত একদল শত্রু সেনা মক্কা থেকে রওনা হয়েছিল আরেক দিকে ছিল মুশরিক বণিক দল যারা মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেছিল।
আমার অনুধাবন:
সব সময় সব অবস্থায় মন এবং জিহ্বাকে আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত রাখতে হবে। যতই দুঃখ-কষ্টে পড়ি না কেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া যাবে না।
মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হচ্ছে গুনাহ করে ফেললেও তওবা বা অনুশোচনা করলে এবং আবার সে গুনাহ না করার শর্তে মহান আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেন। কারণ তিান ক্ষমাশীল।
জিহাদ করা মানে শুধু নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন করা কিংবা কোন জাতিকে পদানত করা নয়। অন্যায়, অবিচার এবং অত্যাচার থেকে বিশ্ব সমাজকে রক্ষা করা হচ্ছে জিহাদ। ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তা বিধান হচ্ছে জিহাদ। যা সম্ভব ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
সমাজে কিছু লোক আছে যরা তাদের আকীদা ও বিশ্বাসের ব্যাপারে দোদুল্যমান।ঈমান ও আকীদার ব্যাপারে তাদের মত না হয়ে অটল থাকতে হবে। সমাজের সবাই যদি এর জন্য তাদের বিরুদ্ধে চলে যায় তবে চিন্তার কারণ নেই। কারণ মুমিনদের সাথে আল্লাহ আছেন এবং থাকবেন।
প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তার উপার্জনের একটি অংশ আল্লাহর রাস্তায় দান করা। বর্তমান যুগে এ দান যে সব আলেমরা ইসলামের প্রচার, প্রসারে কাজ করছে এবং এতিম ও দরিদ্রদের কল্যাণে নিয়োজিত আছে তাদের দেয়া যেতে পারে।
বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় মূলত: ইসলামের সত্যতার নিদর্শন। অন্ধ ঈমানের চাইতে জ্ঞান ও সচেতনতার সাথে ঈমান অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বদরের যুদ্ধের যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানরা তা স্পষ্টভাবে দেখতে পায়।
বর্তমান যুগের প্রেক্ষিত ভিন্ন। যুদ্ধর জন্য এখন যা প্রয়েজিন তা রাষ্ট্ররে দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা। জিহাদের নামে নিরীহ জনগণকে হত্যা করা জিহাদ নয়।