সূরা আনফাল । রুকু ৪।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

সূরা আনফাল। রুকু - ৪।
আয়াত ২৯-৩৭। 

ঈমানী দায়িত্ব পালনে আল্লাহ ভীতি ও ত্যাগের অপরিহর্যতা।  


আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:

২৯ আযাত: আল্লাহ ভীতি বা তাকওয়া। 

----------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৯) হে মুমিণগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করিবার শক্তি দিবেন, তোমাদের পাপ মোচন করিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করিবেন এবং আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

  • তাকওয়ার করলে আল্লাহ : 

  1. ন্যায়- অন্যায়ের পার্থক্য করার শক্তি দিবেন ।

  2. পাপ মোচন করবেন। 

  3. হ্মমা করবেন। 

  4. কারণ আল্লাহ  মহা অনুগ্রহের মালিক। 


৩০ নং আয়াত: হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্র। 

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩০) স্মরণ কর, কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করিবার জন্য, হত্যা করিবার অথবা নির্বাসিত করিবার জন্য এবং তাহারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • এই আয়াতে মহান আল্লাহ সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের  ষড়যন্ত্র এবং তার বিপরীতে আল্লাহর কৌশল সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। 

  • আল্লাহ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অবিশ্বাসীদের হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে বন্দী, হত্যা  বা নির্বাসনের জন্য যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা প্রতিহত করেন। 

  • আল্লাহতায়ালার কৌশল সর্বোত্তম। 


৩১ নং আয়াত: অবিশ্বাসীদের বিদ্রুপ। 

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩১) যখন তাহাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন বলে, ‘আমরা তো শ্রবণ করিলাম, ইচ্ছা করিলে আমরাও ইহার অনুরূপ বলিকত পারি, ইহা তো শুধু সেকালের উপকথা।’ 

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কুরআনের আয়াত শুনে আল্লাহর প্রতি চ্যলেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। তারাও এরকম লিখতে পারে। 

  • কুরআনকে সেকালের উপকথা বলে বিদ্রুপ করে। 


৩২ ও ৩৩ নং আয়াত : কফিরদের আল্লাহর সত্যতার প্রমাণ চেয়ে শাস্তি কামনা করা।

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩২) স্মরণ কর, তাহারা বলিয়াছিল, ‘হে আল্লাহ! ইহা দি তোমার পক্ষ হইতে সত্য হয়, তবে  আমাদের উপর আকাশ হইতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে  মর্মন্তুদ শাস্তি দাও ‘ 

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৩) আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাহাদের মধ্যে  থাকিবে, অথচ তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন, এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তাহারা ক্ষমা প্রার্থনা করিবে অথচ তিনি  তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন। 

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কুরআনের বাণীর সত্যতা প্রমাণের জন্য তারা চ্যালেঞ্জ করে, যদি বাণী সত্যি হয় , তবে ঠিক আছে আমরা তো বিশ্বস করলাম না। আসমান থেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে শাস্তি দাও। 

  • আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কাফেরদের মধ্যে উপস্থিত  থাকায় গজব দিতে চান নি।

  • তাছাড়া আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থীকে ক্ষমা করেন।

  • মহান আল্লাহর রহমত শাস্তির চাইতে বেশী। তিনি শাস্তি দেয়ার আগে ধৈর্য় ধরেন। তিনি ক্ষমাশীল। কেউ অন্যায় করে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করেন।  


৩৪ নং আয়াত: মক্কার মুশরিকেদের মুসলমানদের উপর অত্যাচারের খন্ড চিত্র। 

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৪) এবং তাহাদের কী বা বলিবার আছে যে, আল্লাহ তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তাহারা লোকদেরকে মসজিদুল হারাম হইতে নিবৃত্ত করে? তাহারা উহার তত্ত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকীগণই উহার তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা অবগত নয়। 

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মসজিদুল হারামে ইবাদত করতে দিতনা। 

  • মুশরিকরা জোর করে অন্যায়ভাবে  মসজিদুল হারামের তত্বাবধায়ন  করত। 

  • আসল তত্ববধায়ক মুত্তকীরা। 

  • মুশরিকরা তাদের এই অন্যায় আচরণের জন্য আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন। 


৩৫ নং আয়াত: মুশরিকদের অযোগ্যতার কারণ বর্ণনা। 

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৫) কাবাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মুশরিকদের সালাতের কোন নিয়ম ছিল না। তারা হাততালি ও শিস দিয়ে মসজিদুল হারামের চারপাশে ঘুরে বেড়াত। 

  • আল্লাহ তাদের এই কাজকে গ্রহণ করেন নি। 

  • এর সাথে ইসলামী সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই।  


৩৬ নং আয়াত: সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরাভূত হবার সংবাদ।  

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৬) আল্লাহর পথ হইতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাহাদের ধনসম্পদ ব্যায় করে, তাহারা ধন-সম্পদ ব্যয় করিতেই থাকিবে; অতঃপর উহা তাহাদের মনস্তাপের কারণ হইবে; ইহার পর তাহারা পরাভূত হইবে এবং যাহারা কুফরী করে তাহাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হইবে। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মানুষকে ইসলাম ধর্ম গহণ না করার জন্য কাফেররা তাদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। 

  • তারা ফরে অনুতপ্ত হবে কারণ তাদের অর্থ-সম্পদ ইসলাম গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করতে পারে নি। 

  • কাফেরদের সব প্রচেষ্টা বিফল হয়। 

  • এই পৃথিবীতে তারা আক্ষেপ করবে । 

  • পরকালে জাহান্নামে যাবে। 


৩৭ নং আয়াত: 'খবিছ' বা খারাপদের  কীভাবে পরাভূত করা হবে। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৭) ইহা এইজন্য যে, আল্লাহ কুজনকে সুজন হইতে পৃথক করিবেন এবং কুজনদের এককে অপরের উপর রাখিবেন, অতঃপর সককে স্তূপীকৃত করিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবেন, ইহারাই ক্ষতিগ্রস্থ।

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


  • মহান আল্লাহ ভাল থেকে খারাপকে আলাদা করবেন। 

  • যারা  'খবিছ' বা খারাপ তাদেরকে একজনের উপর আরেকজন- এভাবে স্তূপিকৃত করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করা হবে।  

  • এরাই ক্ষতিগ্রস্থ। 


আমার অনুধাবন: 


  • আল্লাহকে ভয় করলে  অন্তর ও চিন্তা চেতনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ মহান আল্লাহ তাদের বুঝ-সমঝ দান করেন । তারা সত্য-মিথ্যা এবং ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারে। পাপ মোচন ও ক্ষমা করে দেন। আর এই সুন্দর চেতনার মানুষের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ থাকে। 

  • ষড়যন্ত্র প্রবণতা একটি দোষ। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা যায়। 

  • আল্লাহর সকল কাজ হচ্ছে সবার শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। আল্লাহ যখন কৌশল গ্রহণ করেন তাও হচ্ছে সর্বত্তম। 

  • কুরআনকে চ্যালেঞ্জ করা চরম মূর্খতার পরিচয়। কাফেররা এরকম লিখতে পারেন বলে বাহাদুরী দেখালেও তাদের দ্বারা এ ধরণের আয়াত লেখা সম্ভব হয় নি। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে কুরআন আল্লাহর পবিত্র বাণী । মানুষের মনো রঞ্জনের জন্য কোন কল্প কাহিনী নয়। 

  • বেশীর ভাগ মানুষই জানেনা মুত্তাকী এবং সত্‌কর্মশীল মানুষেরা শুধু আল্লাহর ঘর তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। যারা মুমিন লোকদের মসজিদে ঢুকতে বাধা দেয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করেন আল্লাহ তাদের কঠিন শাস্তি দিবেন। 

  • আমরা বর্তমান যুগেও দেখতে পাই অনেক দেশে এমনি আমাদের দেশেও একটি নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে নাচ-গান, লাফালফি করে আল্লাহর জিকির করে। এই আয়াত থেকে আমার অনুধাবন মূল ইসলামী সংস্কৃতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। 

বর্তমান যুগেও ইসলামের প্রতি শত্রুতা বজায় রেখেছে। মুসলমানদের ধ্বংসের জন্য দেশীয় সংস্কৃতি ও  প্রগতিশীলতার নামে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদের অর্থ্যাত্‌ মুসলমানদের হতাশ হলে চলবে না। কুরআন নির্দেশিত সঠিক পথে জীবন পরিচালনা করলে কাফেররা যতই প্রভাব প্রতিপত্তি  এবং ধন-সম্পত্তির অধিকারী হোক না কেন তাদের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url