সূরা আনফাল রুকু ২
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
সূরা আনফাল। রুকু ২।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আয়াত ১১ -১৯।
যুদ্ধক্ষেত্রে মুমিন।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়।
১১ নং আয়াত: বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের শংকা দূরীকরণে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত।
—----------------------------------------------------------------------
(১১) স্মরণ কর, তিনি তাঁহার পক্ষ হইতে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হইতে তোমাদের উপর বারি বর্ষণ করেন উহা দ্বারা তোমাদেরকে পবিত্র করিবার জন্য, তোমাদের মধ্য হইতে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য, তোমাদের হৃদয় দৃঢ় করিবার জন্য এবং তোমাদের পা স্থির রাখিবার জন্য।
—----------------------------------------------------------------------
রাতে তন্দ্রা দিয়েছেন।
রহমতস্বরূপ বৃষ্টি দিয়েছেন।
পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দিয়েছেন।
শয়তানের কুপ্ররোচনা দূর করেন।
মুসলিমদের মনের শংকা দূর করে স্বস্তি দান করেন।
মুসলমানদের তাদরে বিজয় সম্পর্কে সুনিশ্চিত ধারণা জন্মে।
১২ নং আয়াত: মুসলিমদের মনে আশার সঞ্চার ও মনোবল বৃদ্ধি।
—----------------------------------------------------------------------
(১২) স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ফিরিশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, সুতরাং মুমিনগণকে অবিচলিত রাখ।’ যাহারা কুফরী করে আমি তাহাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করিব; সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাহাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাহাদের আঙ্গুলের অগ্রভাগে।
—----------------------------------------------------------------------
ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলমানদের মনে আশার সঞ্চার ও মনোবল বৃদ্ধি ।
অবিশ্বাসীদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার।
মুসলিমদের স্কন্ধ, হাত ও পায়ের আঙ্গুলে আঘাত করতে বলা হয়েছে যাতে তারা যুদ্ধ করতে অক্ষম হয়।
১৩ ও ১৪ নং আয়াত: আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
—----------------------------------------------------------------------
(১৩) ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহ ও রাসুলের বিরোধিতা করে এবং কেহ আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের বিরোধিতা করিলে আল্লাহ তো শাস্তিদানে কঠোর।
—----------------------------------------------------------------------
(১৪) সুতরাং ইহার আস্বাদ গ্রহণ কর এবং কাফিরদের জন্য দোজখের শাস্তি রহিয়াছে।
—----------------------------------------------------------------------
অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধে বিশ্বাসী মুসলমানদের বিজয় - অবিশ্বাসীদের ওপর আল্লাহর শাস্তি।
অবিশ্বাসীরা আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর বিরোধিতা করে।
তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
১৫ ও ১৬ নং আয়াত: যুদ্ধের ময়দানে শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি।
—----------------------------------------------------------------------
(১৫) হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হইবে তখন তোমরা তাহাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়ো না;
—----------------------------------------------------------------------
(১৬) সেদিন যুদ্ধ-কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান নেওয়া ব্যতীত কেহ তাহাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিলে সে তো আল্লাহর বিরাগভাজন হইবে এবং তাহার আশ্রয় জাহান্নাম, আর উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
—----------------------------------------------------------------------
কাফের সেনাদের দেখে পালিয়ে না যাওয়া।
দুটি কারণে স্থান পরিবর্তন করতে পারবে (১) যুদ্ধ কৌশল অবলম্বনের জন্য (২) দলের লোকবল বৃদ্ধির জন্য।
যুদ্ধে পলায়নকারী ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধের শিকার হতে পারে।
তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
১৭ ও ১৮ নং আয়াত: মুমিনদের প্রতি সতর্কবাণী।
—----------------------------------------------------------------------
(১৭) তোমরা তাহাদেরকে হত্যা কর নাই, আল্লাহই তাহাদেরকে হত্যা করিয়াছেন, এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করিয়াছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ কর নাই, আল্লাহই নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, এবং ইহা মুমিণগণকে আল্লাহর পক্ষ হইতে উত্তমরূপে পরীক্ষা করিবার জন্য; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ্ ।
—----------------------------------------------------------------------
(১৮) ইহাই তোমাদের জন্য, আল্লাহ কাফিরদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করেন।
—----------------------------------------------------------------------
মুমিনদের আল্লাহর ঐশী সাহায্যর কথা স্মরণ করানো হয়েছে।
তারা যেন না ভাবে নিজেদের শক্তিতে তারা জয়ী হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্র মুমিনদের ঈমানের পরীক্ষার করার স্থান।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য নির্ধারিত আছে উত্তম স্থান।
আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
প্রকৃত ঈমানদারদের সহায়তার জন্য কাফেরদের ষড়যন্ত্র নস্যাত্ করে দেন।
১৯ নং আয়াত: কাফেরদের মীমাংসার প্রস্তাবনা।
—----------------------------------------------------------------------
(১৯) তোমরা মীমাংসা চাহিয়াছিলে, তারা তো তোমাদের নিকট আসিয়াছে; যদি তোমরা পুনরায় কর তাতে আমিও পুনরায় শাস্তি দিব এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হইলেও তোমাদের কোন কাজে আসিবে না, এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের সঙ্গে রহিয়াছেন।
—----------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মধ্যেই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।
দৃঢ় ঈমান এবং আনুগত্য থাকলে আল্লাহর আনুগত্য অবশ্যই পাওয়া যাবে।
আমার অনুধাবন:
- মানুুষের বিপদে আপদে মনের প্রশান্তি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। মন অশান্ত থাকলে তার পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। বিক্ষিপ্ত মন বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তন্দ্রা এই অন্তরের প্রশান্তি ও ক্লন্তি দূর করার মহৌষধ।
শুধু ঐশী সাহায্যর উপর নির্ভর শীল হয়ে বসে থাকলে হবে না। বাতিল শক্তি, মিথ্যা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ করতে হবে। আল্লাহ সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন ভেবে নিস্ক্রিয় হয়ে থাকা যাবে না।
যুদ্ধের সময় শত্রু যোদ্ধার বিরুদ্ধে এমন নীতি নিতে হবে যাতে সে অকেজো হয়ে যায়। তাহলে তাকে সহজে পরাজিত করা যাবে।
আল্লাহর সাহায্য পেতে গেলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচারণ , অন্যায় ও জুলুম করা যাবে না এবং সত্য পন্থী থাকতে হবে । তখনই আমরা ঐশী সাহায্য কামনা করতে পারি।
সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শত্রুদের শক্তিমত্তা দেখে পিছিয়ে যাওয়া যাবে না। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।
মানুষ তার নিজ ইচ্ছায় ও শক্তি দিয়ে কাজ করলেও আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্য ছাড়া তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না।
সবচেয়ে বড় কথা যখন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করবে তখন বিপক্ষ দলের প্রভাব প্রতিপত্তিকে ভয় করার করণ নাই। কারণ সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় যে ব্যক্তি নিজেকে যুক্ত রাথখ তার সাহায্যকারী স্বয়ং আল্লাহ।