সূরা বাকারা, রুকু - ৬।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
    নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।


সূরা বাকারা রুকু - ৬

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আয়াত :৪৭ - ৫৯

বনী-ঈসরাঈলীদের উপর ঐশ্বরিক অনুগ্রহ।



আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
৪৭ নং আয়াত: বনী-ঈসরাঈলীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত।
____________________________________________________________________________
(৪৭) হে বনী ঈসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যদ্দারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত  করিয়াছিলাম এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। 
____________________________________________________________________________
এর আগের আয়াতগুলিতে (৪০) সামগ্রিক ভাবে বনী-ঈসরাঈলীদেরকে দেয়া আল্লাহর নেয়ামতসমূহের কথা বলা হয়েছে।এই আয়াতে বিশেষভাবে একটি নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে। 
  • আল্লাহ ইহুদীদের বিশেষ ক্ষেত্রে  বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন ।
৪৮ নং আয়াত: কেয়ামতের দিন। 
____________________________________________________________________________
(৪৮) তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেহ কাহারও কোন কাজে আসিবে না, কাহারও সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে না, কাহারও নিকট হইতে বিনিময় গৃহীত হইবে না এবং তাহারা কোন প্রকার সাহায্যপ্রাপ্তও হইবে না। 
____________________________________________________________________________
  • কেয়ামতকে ভয় করতে বলা হয়েছে।
  • কেয়ামতের দিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না।  । 
  • ধর্মীয় নেতা বা অন্য কারো সুপারিশ কাজে আসবে না। 
  • ক্ষতিপূরণ দিয়েও শাস্তির হাত হতে রক্ষা পাবে না।
  •  কোন বন্ধু  তাদের সাহায্য করতে পারবে না। 
  • সবাই নিজ নিজ মুক্তি চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। 
৪৯ নং আয়াত: বনী ঈসরাঈলীদের পরীক্ষা।
____________________________________________________________________________
(৪৯) স্মরণ কর, যখন আমি ফির'আওনী সম্প্রদায় হতে তোমাদেরকে নিস্কৃতি দিয়াছিলাম, যাহারা তোমাদের পুত্রগণকে যবেহ করিয়া ও তোমাদের নারীগণকে জীবিত রাখিয়া তোমাদেরকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিত; এবং উহাতে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে এক মহাপরীক্ষা ছিল।
____________________________________________________________________________
ফেরাউন তার শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য 
  • বনী ইসরাঈলীদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত। 
  • কন্যা সন্তানদের বাঁচিয়ে রেখে তাদেরেকে ক্রীতদাসী করে রাখত। 
  • এই দুঃখ-দুর্দশা ছিল মহান আল্লাহর পরীক্ষা। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী ১
হযরত মূসা (আঃ) এর যুগে মিশরের সম্রাটের ঊপাধি ছিল ফেরাউন। তিনি একদিন স্বপ্নে দেখেন 'বায়তুল মুকাদ্দাস ' এর দিক থেকে আগত আগুন মিশরকে অবরোধ করে এবং সমস্ত কিবতী (ফেরাউনের সমর্থক) সম্প্রদায়কে জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু বনী ঈসরাঈলীদের কোন ক্ষতি করেনি। বনী  ইসরাঈলীরা তখন মিশরেরে দিবারাত্রি দাসদের মত অমানুষিক পরিশ্রমের কাজ করত। ফেরাউন স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে যান।  এক  রাজ জ্যোতিষী ব্যখ্যা  করে বনী ঈসরাঈলীদের বংশে একটি ছেলের জন্ম হবে এবং সে ফেরাউনের ধ্বংসের কারণ হবে। দুনিয়ার ইতিহাসে আল্লাহর নাফরমানিত, অবাধ্যতায় এবং বিদ্রোহী বান্দদের মধ্যে ফেরাউন ছিল শীর্ষ স্থানীয়।  এজন্য ফেরাউন আদেশ দেন ঈসরাঈলীদের পুত্র সন্তানদের হত্য ও কন্য সন্তানকে দাসীগিরি করার জন্য জীবিত রাখতে। হযরত মূসার মা তাঁর জন্মের পর তিন মাস লুকিয়ে রাখেন। পরে আর সম্ভব না হলে একটি ঝুড়িতে করে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। ফেরাউনের স্ত্রী ও কন্যা তাঁকে উদ্ধার করেন এবং দত্তক নেন। মূসা (আঃ) আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর শত্রুদের দ্বারাই প্রতিপালিত হন। 

৫০ নং আয়াত : বনী ঈনরাঈলীদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য।
____________________________________________________________________________
(৫০)  যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিধাবিভক্ত করিয়াছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করিয়াছিলাম ও ফির'আওনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করিয়াছিলাম আর তোমরা উহা প্রতিক্ষা করিতেছিলে।  
____________________________________________________________________________
বনী ঈসরাঈলীদের  মিশর থেকে পালাবার পথে আল্লাহ সাহায্য করেন। 
  • সাগর দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। 
  • বনী ঈসরাঈলীরা সাহর অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। 
  • কিন্তু ফেরাউন তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে গিয়ে তার দলবল সহ মারা যায়। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী ২:
বনী ঈসরাঈলীরা হযরত মূসা (আঃ) এর নেতৃত্বে মিশর থেকে পলায়ন করতে সক্ষম হন। ফেরাউন তাদের ধরার জন্য পশ্চাত্‌ধাবন করে। ফেরাউন সাগরের তীরে এসে তাদের দেখতে পায়। বনী ঈসরাঈলীরা সামনে সাগর ও পিছনে বিশাল সৈন্য বাহিনী সহ ফেরাউনকে  দেখে মূসা (আঃ) এর নিকট ফরিয়াদ করে। মূসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে  স্বীয় লাঠি দিয়ে সাগরের পানিতে আঘাত করলেন। এর বরকতে সাগরের বুকে পানি দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে  রাস্তা তৈরী করে। মূসা (আঃ) নির্বিঘ্নে তাঁর দল বল নিয়ে রাস্তা পার হয়ে যান।  ফেরাউনও তাদের দেখাদেখি তার লোকজন নিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে যখন সাগরের মাঝখানে পৌঁছান তখন সাগর আপন অবস্থায় ফিরে যায়। ফেরইন তার দলবল সহ চিরতরে সলিল সমাধি লাভ করল। 
 
৫১, ৫২ ও ৫৩  আয়াত: তাওরাত ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকরণের মাপকাঠি প্রদান।
____________________________________________________________________________
(৫১)  যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করিয়াছিলাম, তাহার প্রস্থানের পর তোমরা তখন গোবত্‌সকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে; আর তোমরা তো জালিম। 
____________________________________________________________________________
(৫২) ইহার পরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করিয়াছি, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পার। 
____________________________________________________________________________
(৫৩) আর যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দান করিয়াছিলাম যাহাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হও। 
____________________________________________________________________________
আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মূসা (আঃ) কে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তুর পাহাড়ে চল্লিশ দিন ইতিকাফ  করলে তাকে তাওরাত দান করবেন।
  • মূসা (আঃ) তূর পাহাড়ে যান। 
  • তাঁর অনুপস্থিতিতে বনী ঈসরাঈলীরা গো বত্‌স নির্মাণ করে তার পূজা শুরু করে শিরকের মত অপরাধে জড়িত হয়। 
  • তারা জালিম। নিজেরা নিজেদের উপর অত্যাটার করে। 
  • তারা তওবা করে। 
  • আল্লাহ তা'য়ালা তাদের ক্ষমা করেন ।
  • আল্লাহ মূসা (আঃ)কে  কিতাব এবং  ফুরকান যা সত্য ও মিথ্যা মধ্যে পার্থক্য করতে পারে তা  প্রদান করেন। 
  • উদ্দেশ্য বনী ঈসরাঈলীরা যাতে সঠিক পথে আসে। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী   ৩, ৪ ও ৫। 
ফেরাউনের মৃত্যুর পর বনী ঈসরাঈলীরা শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে বনী ঈসরাঈলীদের জন্য কার্যনীতি অর্থ্যাত্‌ শরীয়তের  প্রার্থ‍‍না করেন। মহান আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন এবং মূসা (আঃ)কে আদেশ দিলেন 'তূর' পাহাড়ে গিয়ে  আল্লাহর এবাদত করলে কিতাব প্রাপ্ত হবেন। সেমত তিনি 'তুর' পাহাড়ে চলে  গেলেন। একমাস রোযা রাখেন। পরে আল্লাহ আরো দশদিন বৃদ্ধি করে দেন। তিনি কিতাব ও ফুরকান প্রাপ্ত হলেন। যার সাহায্যে ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা যায়। 
তাঁর অনুপস্থিতিতে বনী ঈসরাঈলীরা অধৈর্য হয়ে ওঠে । তারা সোনা দিয়ে একটি গো বত্‌রসের মূর্তি  নির্মাণ করে  তাকে উপাস্য হিসাবে পূঁজা শুরু করে। তারা এমন জালিম যারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করে।
হযরত মূসা (আঃ) তাঁর জাতির জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। 
  
৫৪ নং আয়াত: বনী ঈসরাঈলীদের আনুগত্যের বদলে অবাধ্যতা।
____________________________________________________________________________
(৫৪)  আর যখন মূসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! গো-বত্‌সকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়া তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করিয়াছ, সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরিয়া যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার নিকট ইহাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হইবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। 
____________________________________________________________________________
  • বনী ঈসরাঈলীরা গো-বত্‌সের উপাসনা করে শিরকের মত  বড় অপরাধ করে। 
  • শিরক করা নিজের আত্মার উপর  অত্যাচার করা। কারণ এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। 
  • আনুগত্যের বদলে অবাধ্যতা প্রকৃতপক্ষে আত্মহনন। 
  •  হযরত মূসা (আঃ) আত্ম অত্যাচারকারীদের  তওবা করার  আহ্বান জানান। 
  • তাদের তওবার পদ্ধতি ছিল আত্ম বিসর্জনের মাধ্যমে নিজেদের সংযত করা যা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়।
  • মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। 
  • কারণ তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়ালূ। ( তওয়াবুর রহীম) 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী ৬ । 
এই আয়াতে বনী ঈসরাঈলীদের তওবার বিধান বর্ণিত হয়েছে। সে সময় এই বিধান ছিল যে কবীরা গুনাহ করলে তাকে হত্যা করে ফেলা হত। বনী ঈসরাঈলীরা তওবা করেছিল এবং গো বত্‌স পূজার অপরাধ হতে মার্জনা পেয়ে আল্লাহর রহমত ও করুণার পাত্র হয়। 

৫৫ ও ৫৬ নং আয়াত: বনী ঈসরাঈলীদের অযৌক্তিক দাবী। 
____________________________________________________________________________
(৫৫) যখন তোমরা বলিয়াছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করিব না, তখন তোমরা বজ্রাহত হইয়াছিলে আর তোমরা নিজেরাই দেখিতেছিলে।
____________________________________________________________________________
(৫৬) অতঃপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করিলাম যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। 
____________________________________________________________________________
  • বনী ঈসরাঈলীরা হযরত মূসা (আঃ)কে বিশ্বাস করেনি। 
  • আল্লাহকে চাক্ষুষ না দেখে মুসা (আঃ)কে নবী মানতে অস্বীকার করে।
  • মূসা (আঃ) এর সঙ্গীরা বজ্রের আঘাতে  মৃত্যুবরণ করে।
  •  তাদের উপর আপতিত বিপদ তারা স্বচক্ষে অবলোকন করে। 
  • পরে আল্লাহ তা'য়ালা মূসা (আঃ) এর সঙ্গীদের পুনরুজ্জীবিত করেন। 
  • তাদেরকে বজ্রাঘাতের মাধ্যমে মৃত্যু এবং তা থেকে ক্ষমা করে আবার পুনরুজ্জীবন লাভের নেয়ামতের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানাতে বলা হয়েছে। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী  ৭ ও ৮ ।
হযরত মূসা (আঃ) তূর পর্বত থেকে 'তাওরাত' কিতাব নিয়ে বনী ঈসরাঈলীদের সামনে দিলেন। তারা মুসা (আঃ) এর কাছে প্রশ্ন রাখল 'আল্লাহ তা'আলা যে সত্যিই আমাদেরকে এ কিতাব অনুসরণ করতে বলেছে তা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি ? যদি স্বয়ং আল্লাহ বলেন এ কিতাব তাঁর প্রদত্ত তবে অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস হবে।
আল্লাহর আদেশে মূসা (আঃ) সত্তর জন লোককে বেছে নিয়ে তূর পাহাড়ে যান। তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের কারণে তাদের উপর বজ্রপাত হয়। এর ফলে তারা মারা যায় এবং আল্লাহ তাদের আবার পুনরায় জীবিত করেন। 

৫৭ নং আয়াত: আল্লাহর আরো নেয়ামত।
____________________________________________________________________________
(৫৭) আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করিলাম । বলিয়াছিলাম, 'তোমাদেরকে যে উত্তম জীবিকা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর।' তাহারা 'আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল।'
____________________________________________________________________________
  • মেঘ বৃষ্টিহীন রোৗদ্রতপ্ত মরুভূমিতে মহান আল্লাহ বনী ঈসরাঈলীদের মেঘ দিয়ে ছায়া দিয়েছেন। 
  • খাবার হিসাবে মান্না ও সালওয়া দিয়েছেন। 
  • তারপরেও বনী ঈসরাঈলীরা কৃতজ্ঞ হয়না বরং ন্যায় ও অসদাচরণের পথ অবলম্বন করে। 
  • এর কুফল তাদের নিজেদেরকেই ভোগ করতে হয়। অথ্যাত্‌ তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করে। 
  • তারা আনুগত্যের বদলে অবাধ্যতা করে আত্মহনন করে। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী  ৯।
বনী ঈসরাঈলীরা আল্লাহর আদেশ না মানায় তাদের 'তীহা' নামক উপত্যাকায় আটকিয়ে দেয়া হয়েছিল।তাদের এই শাস্তিকালীন সময় আল্লাহ তাদের উপর নানা নিয়ামত বর্ষণ করেন। এই আয়াতে তা বিবৃত হয়েছে। 
মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) এর দোয়ার বরকতে তাদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটাবার বন্দোবস্ত করেন। এর মধ্যে উল্লেখ্য - মেঘ দ্বারা ছায়া দান, ক্ষুধা পেলে খাবার জন্য মান্না ও সালওয়ার ব্যবস্থা করেন।  

৫৮ ও ৫৯ নং আয়াত:  বনী ঈসরাঈলিদের অবাধ্যতা ।
____________________________________________________________________________
(৫৮) স্মরণ কর, যখন আমি বলিলাম, 'এই জনপদে প্রবেশ কর, যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নতশিরে প্রবেশ কর দ্বার দিয়া এবং বল: 'ক্ষমা চাই। 'আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব এবং সত্‌কর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করিব।' 
____________________________________________________________________________
(৫৯) কিন্তু যাহারা অন্যায় করিয়াছিল তাহারা তাহাদেরকে যাহা বলা হইয়াছিল তাহার পরিবর্তে অন্য কথা বলিল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হইতে শাস্তি প্রেরণ করিলাম, কারণ তাহারা সত্য ত্যাগ করিয়াছিল। 
____________________________________________________________________________
  • তাদেরকে এমন এক জনপদে প্রবেশ করতে বলা হল যেখানে তাদের জন্য অঢেল রিজিক মওজুদ ছিল।
  • বিনয়ের সাথে নতশিরে নগরের দরজা দিয়ে প্রবেশ  এবং ক্ষমা (হিত্‌তা)  চাইতে চাইতে প্রবেশ করতে বলা হয়।  
  • যারা করে তাদের আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং সত্‌কর্মপরায়ণ লোাকদের দান বৃদ্ধি করবেন। 
  • অনাচারীদের জন্য মহান আল্লাহ আকাশ হতে শাস্তি প্রেরণ করলেন। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী ১০, ১১। 
বনী ঈসরাঈলীদের একটি শহরে যাবার আদেশ করা হয়েছিল। যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের ব্যবস্থা ছিল। আল্লাহ  আদেশ দিয়েছিলেন ঐ  শহরে দরজা দিয়ে প্রবেশের সময় বিনয়ের সাথে নত শিরে মুখে ক্ষমা চাইতে চাইতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন ক্ষমা করবেন। আর সত্‌কর্ম পরায়ণ বান্দাদের দান করবেন। 
কিন্তু জালিম বনীঈসরাঈলীরা আবারও টেড়া মানসিকতার প্রমাণ দিল। তাদের যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল তা বিকৃত করে উচ্চারণ করে তাকা তামাশায় রূপান্তরিত করে শহরে প্রবেশ করে।  তারা আনুগত্যের বদলে অবাধ্যতা প্রদর্শন করে। আল্লাহ তাদের উপর আকাশ থেকে শাস্তি পাঠান। কোন কোন তাফসীরকারকের মতে এই শাস্তি ছিল প্লেগ রোগ। 

আমার অনুধাবন: 

  • কেয়ামতের দিন সবাই ব্যন্ত থাকবে নিজের মুক্তি চিন্তায়।কারো কাছ থেকে কোন রকম সাহায্য পাওয়া যাবে না। নিজের ঈমান ও সত্‌কাজ শুধু কাজে আসবে। 
  • মহান আল্লাহ দুঃখ-দুর্দশা এবং মুক্তি-শান্তি দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। 
  • আল্লাহর ইচ্ছা কীভাবে প্রতিপালিত হয় তা বোঝার ক্ষমতা বা রদ করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাই। 
  • অন্যায়কারীর ধ্বংস অবধারিত। 
  • স্থুল চেতনাসম্পন্ন লোকেরা  গোয়ার্তুমি ও হঠকারিতা নিয়ে চলে । তাদের জ্ঞানার্জনের একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থুল বস্তুবাদী অনুভূতি। 
  • এ ধরণের মানুষকে আল্লাহর নিদর্শন, সহায়, সম্পদ, ক্ষমা যত কিছুই দেয়া  হোক না কেন তারা ইন্দ্রিয়ানুভূতি ছাড়া অন্য কিছু বিশ্বাস করে না। 
  • আল্লাহকে খুশী করতে হলে  কাজে বিজয়ের পরও বিনয়ী ও ভদ্র থাকতে  হবে । 
  • আমাদের উদ্ধত আচরণ ও অহংকার  ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। 
  • আল্লাহ ক্ষমাশীল। আন্তরিকভাবে তওবা বা ক্ষমতা প্রার্থনা করতে হবে। 
  • প্রাথনা  করতে হবে 'হে  আল্লাহ! আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দাও।' 
———+———

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url