সূরা বাকারা , রুকু -৭।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
    নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।


সূরা বাকারা রুকু - ৭

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আয়াত :৬০ -  ৬১ 

ঈসরাঈলীদের উপর ঐশ্বরিক অনুগ্রহ


৬০ নং আয়াত: বনী ঈসরাঈলীদের শ্রমবিহীন জীবনোপকরণ। 
____________________________________________________________________________
(৬০) স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করিল, আমি বলিলাম, 'তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর। ফলে উহা হইতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হইল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান চিনিয়া লইল। বলিলাম, 'আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা হইতে তোমরা পানাহার কর এবং দুস্কৃতিকারী রূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করিয়া বেড়াইও না। ''
____________________________________________________________________________
যখন মূসা (আঃ) তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ভ্রমণে ছিলেন তখন তারা অসহনীয় পানির পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েন। মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে পানির জন্য প্রার্থনা করেন। 
  • নির্দেশ এলো লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করার জন্য।
  • বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়।
  • বনীঈসরাঈলীেদের বারটি গোত্র তাদের নির্ধারিত পানির ঘাট ব্যবহার করত।। 
  • তারা নিজেদের পানির ঘাট ছেড়ে অন্য আরেকজনের ঘাটে যেত না। 
  • আল্লাহ তাদেরকে প্রদত্ত জীবিকা (মান্না ও সালওয়া) হতে পানাহার করার নির্দেশ দেন। 
  • তাদের রিজিক নিজেদের অর্জিত নয়। মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। 
  • সত্য ত্যাগ  করে পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেন। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী ১২
এই ঘটনা সে সময়কার যখন তীহা মরুভূমিতে আটকে পড়েছিল। পানির কোন ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। পিপাসায় কাতর হয়ে তাা মূসা (আঃ) এর কাছে পানি চাইল। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে আঘাত করতে বললেন। আল্লাহর অপার মহিমায় বারটি প্রস্রবনের সৃষ্টি হয়। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর ১২টি সন্তান ছিল। সে হিসেবে তাদের ১২টি গোত্র ছিল। মহান আল্লাহ তাদের মান্না সালওয়া ভক্ষণ এবং  এই প্রস্রবণগুলির পানি পান করতে বলেন। 

#এতক্ষণ পর্যন্ত বনী ঈসরাঈলিদের আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে শুরু হয়েছে বনী ঈরাঈলীদের অকৃতজ্ঞতা,  অযোগ্যতা, অসাহসিকতা  এবং অবাধ্যতার ঘটনা। 


৬১ নং আয়াত: বনী ঈসরাঈলীদের  অবিশ্বাস, অবাধ্যতা ও সীমা লংঘন।  
____________________________________________________________________________
(৬১) যখন তোমরা বলিয়াছিলে, 'হে মূসা! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য্য ধারণ করিব না; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের  নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর-তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সব্জি, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উত্‌পাদন করেন।' মূসা বলিল, 'তোমরা কি উত্‌কৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তু র সঙ্গে বদল করিতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যাহা চাও নিশ্চয়ই তাহা সেখানেই আছে।' তাহারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্রগ্রস্ত হইল এবং তাহারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হইল। ইহা এইজন্য যে, তাহারা আল্লাহর   আয়াতকে অস্বীকার করিত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করিবার জন্যই তাহাদের এই পরিণতি হইয়াছিল। 
____________________________________________________________________________
  • শুষ্ক  মরুভূমিতে  বনী ঈসরাঈলীদের জন্য পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করা। 
  • তারপরেও তাদের অকৃতজ্ঞতা  ও স্বাথপরতার কারণে হযরত মূসা (আঃ) এর কাছে বেশী খাবারের দাবী করে। 
  • তারা বিনা পরিশ্রমে প্রাপ্ত আসমানী খাবার মান্না-সালওয়ার পরিবর্তে মাটিতে উত্‌পাদিত  খাদ্য চায়। 
  • মূসা (আঃ) তাদের পয়েণ্টেড করে বললেন তারা উত্‌কৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস চাচ্ছে । 
  • এটা পেতে হলে তাদের কোন শহরে যেতে হবে এবং এর জন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। 
  • তারা যুদ্ধ ও জেহাদ করতে রাজী না কিন্তু আরেকদিকে সব নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে চায়।
  • তাদের ভোগবাদী ও খাই খাই মনোভাব লাঞ্ছনা ও দুর্দশার মধ্যে ফেলে। 
  • এই অবাধ্যতার জন্য তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়। 
  • তারা বেশ কয়েকজন  নবী ও রসুলকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। 
  • তারা অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তাদের উপর আল্লাহর গজব  নেমে আসে। 
বনী ঈসরাঈলীদের কাহিনী ১৩।
বনী ঈসরাঈলীরা বিনা পরিশ্রমে লব্ধ খাবার মান্ন ও সালওয়া খেতে খেতে অধৈর্য হয়ে  যায়। প্রতিদিন একই খাবার খাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা ভূমিতে উত্‌পন্ন তরি-তরকারি খেতে চায়।  তারা ভুলে গেল তাদের দাসত্বের বন্ধন ও অত্যাচার। খাবারের প্রাচুর্য  ও  বিভিন্নতা তাদের কাছে বড় হয়ে দাড়ায়।
হযরত মূসা (আঃ) তাদের স্মরণ করিয়ে দেন তারা উত্‌কৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস চাচ্ছে। তিনি তাদের বলেন এটা পেতে হলে কোন নগরীতে যাও।  

আমার অনুধাবন:

  • মহান আল্লাহ আাদের যে নিয়ামত দিয়েছেন তার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। তবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শুধু মুখে বললে হবে না। আচরণ ও কার্যাবলীর  মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। 
  • সব সময় মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান ক্ষনস্থায়ী। এই ক্ষনস্থায়ী জীবনের কার্যকলাপ নির্ধারণ করবে স্থায়ী পরকালের জীবনে  আমাদের অবস্থান কি হবে।
  • মানুষ বিনা পরিশ্রমে লব্ধ নেয়ামতকে গুরুত্ব দেয় না এবং তাদের চাহিদার কোন শেষ নেই। যে কোন সুবিধা নেয়ার পরিণাম হচ্ছে অমর্যাদা ও লাঞ্ছনা।
  • স্বার্থপরতা ও ভোগলিপ্সার পরিণাম হচ্ছে ধ্বংস। 
———+———

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url