সূরা বাকারা - ৫।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
     নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


সূরা বাকারা রুকু - ৫

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আয়াত :৪০ -৪৬ 

    বনী ঈষরাঈলীদের দেয়া নেয়ামত


কুরআন মদীনার ইহুদীদের সামনে তাদের পূর্ব-পুরুষদের ধর্মদ্রোহিতার  বিবরণ তুলে ধরেছে  এবং দেখিয়ে দিয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সাথে হঠকারী ও একগুঁয়েমী মনোভাব দেখাচ্ছে তা তাদের পূর্ব-পুরুষদের সাথে তুলনীয় ও সামঞ্জস্য পূর্ণ। 

আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:

৪০ নং আয়াত: অঙ্গীকার।
____________________________________________________________________________
(৪০) হে বনী ঈসরাঈল ! আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর যদ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করিয়াছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করিব। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। 
____________________________________________________________________________
  • বনী ঈসরাঈলীদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে আল্লাহ তা'আলা তাদের কত  নিয়ামত দান করেছিলেন। 
  • মহান আল্লাহ এই নেয়ামত কতগুলি শর্তের বিনিময় দিয়েছিলেন। 
  • একটি শর্ত হচ্ছে আল্লাহর শুকর আদায় করবে এবং  আরেকটি  প্রতিশ্রুতি  ছিল তাদেরকে প্রেরিত আসমানী কিতাব তাওরাতকে যথাযথভাবে অনুসরণ করবে। 
  • আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবীর প্রতি ঈমান আনবে।   
  • নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্য বিশ্লেষণ দিয়ে তাওরাতের বিধানাবলীতে পরিবর্তন করে। 
  • একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। 
৪১ নং আয়াত: ধর্ম বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা। 
____________________________________________________________________________
(৪১) আমি যাহা অবতীর্ণ (কুরআন) করিয়াছি তোমরা তাহাতে ঈমান আন। ইহা তোমাদের নিকট যাহা আছে (তাওরাত)  উহার প্রত্যায়নকারী। আর তোমরাই উহার প্রত্যাখ্যানকারী হইও না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করিও না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। 
____________________________________________________________________________
  • বনী ঈসরাঈলীদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে  তাদের আসমানী কিতাবের  সত্যতা প্রমাণবারী হচ্ছে কুরআন । 
  • কুরআন মজীদ স্বীকার করে  বনী ঈসরাঈলীদের কিতাব আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।
  • আল্লাহ তাদেরকে কুরআনের উপর ঈমান আনতে আহ্বান জানাচ্ছেন। 
  • কুরআনের প্রত্যাখ্যানকারী  হতে নিষেধ করছেন। 
  • পর্থিব সম্পদের বিনিময়ে ধর্মকে বিক্রিী করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
  • শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। 
৪২ নং আয়াত: সত্য গোপন করা।
___________________________________________________________________________
(৪২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করিও না এবং জানিয়া-শুনিয়া সত্য গোপন করিও না। 
____________________________________________________________________________
  • সত্যর সাথে  মিথ্যা  একত্রীকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
  • জেনে শুনে সত্য গোপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। 
৪৩ নং আয়াত: আল্লাহর এবাদত ও সৃষ্টির সেবা । 
____________________________________________________________________________
(৪৩) তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যাহারা রুকু করে তাহাদের  সঙ্গে রুকু কর। 
____________________________________________________________________________
  • সলাত কায়েম করতে হবে।
  • যাকাত দিতে হবে। 
  • সালাতের একটি পদ্ধতি 'রুকু'এর উপর গুরুত্ব দিয়ে জামাতে পড়তে বলেছে।  
বি.দ্র: ইহুদীদের সালাতে রুকু ছিল না। 

৪৪ নং আয়াত: বে-আমল আলেমদের প্রতি তিরস্কার। 
____________________________________________________________________________
(৪৪) তোমরা কি মানুষকে সত্‌কর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজদেরকে বিস্মৃত হও? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যায়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝ না? 
____________________________________________________________________________
  • মানুষকে সত্‌কর্মের দিকে আহ্বান জানায়  কিন্তু নিজেরা করে না। 
  • তারা  কিতাবও পড়ে। 
  • শুধু মুখে নয় কর্মের মাধ্যমে মানুষকে সত্‌ কাজের আহ্বান জানাতে হবে।
  • এখানে আল্লাহ প্রশ্ন রেখেছেন সব কিছু জেনে বুঝেই কেন তারা এ ধরণের আচরণ করে থাকে। 
৪৫ ও ৪৬  নং আয়াত: সাহায্য প্রার্থনার নিয়ম। 
____________________________________________________________________________
(৪৫) তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং বিনীতগণ ব্যতীত আর সকলের নিকট নিশ্চিতভাবে কঠিন। 
____________________________________________________________________________
(৪৬) তাহারাই বিনীত যাহারা বিশ্বাস করে যে তাহাদের প্রতিপালকের সঙ্গে নিশ্চিতভাবে তাহাদের সাক্ষাতকার ঘটিবে এবং তাঁহারই দিকে তাহারা ফিরিয়া যাবে।
____________________________________________________________________________
  • মহান আল্লাহ  ধৈর্য অর্থ্যাত্‌ দৃঢ়তা এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থেকে সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। 
  • প্রার্থনাকারীকে তার দুঃখমোচন এবং মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। 
  • যারা বিনয়ী নয় তাদের পক্ষে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা  খুব কঠিন। 
  • যারা বিনয়ী তারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে পরকালে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত্‌ হবে ।
  • 'আর আমরা তাঁরই প্রতি প্রত্যবর্তনকারী' - এই বিশ্বাস একজনকে ধৈর্যশীল করে তোলে। 

আমার অনুধাবন:

  • মহান আল্লাহ আমাদের যে নিয়ামত দিয়েছেন তা সব সময় স্মরণ করতে হবে এাং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। 
  • মহান আল্লাহ কিতাবের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের জন্য  ঐশী বিধান দিয়ে আমাদের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার নিয়েছেন তা মেনে চলতে হবে। 
  • শত্রুদের হুমকি এবং প্রচারণায় ভয় না পেয়ে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করতে হবে। 
  • একজন মুসলমান হিসাবে সব আসমানী গ্রন্থ এবং পূর্ববর্তী নবীদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। 
  • আল্লাহর আয়াতকে সামান্য পার্থিব স্বার্থের জন্য বিক্রয়, গোপন বা পরিবর্তন করা যাবে না। 
  • সত্য ও মিথ্যাকে মিশিয়ে ফেললে শয়তান খুব সহজেই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। 
  • আমরা নিজেরা করি না এমন কোন কাজ করতে অপরকে উত্‌সাহিত করা উচিত নয়। 
  • পরকালের প্রতি গভীর বিশ্বাস মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। 
  • আখিরাতে মুমিনগণ আল্লাহর সাক্ষাত্‌রূপী নিয়ামত লাভ করবে। 
——*——

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url