সূরা ফাতেহা




কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।





















দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার যিনি এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা, প্রতিপালক, পরিচালক। যিনি সব সৃষ্টি জগতের প্রভু। যিনি সুবিচক্ষণ , শ্রেষ্ঠ দানশীল, সর্বাধিক ক্ষমতাবান এবং ইত্যকার সর্ববিধ গুণের আধার। যিনি মানুষকে "আশরাফুল মাখলুকাত" হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। যিনি বিশ্বজগতকে পরিচালনা করেন সর্বোত্তম নিয়মে। যিনি তাঁর নৈকট্য ও সাক্ষাত লাভকারীর জন্য সহজ-সরল পথ খোলা রেখেছেন।
আল্লাহর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক নবী ও রাসুলদের নেতা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর ও তাঁর আল-আসহাব এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত উম্মতদের উপর।

আসসালামু আলাইকুম ওয়্যা রাহমাতুল্লাহ।

আমি একজন পেশাদার সমাজকর্মী ছিলাম। পেশাগত জীবনে কলেজে অধ্যাপনা এবং এন,জি,ও এর সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলাম। আমি সমাজকল্যাণ ও সামাজিক নৃবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করেছি। ২০০৪ সনে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করি। অবসর প্রাপ্ত জীবনে প্রথমে যে বিষয়টি আমাকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে তা হচ্ছে 'হতাশা'। দুটি বিষয আমাকে ভাবিয়ে তোলে । অবসরপ্রাপ্ত জীবন আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় , 'তুমি আর কাজের নও' আরেকটি হল মৃত্যু চিন্তা।
ডিগ্রী ও জীবিকা অর্জনের জন্য অনেক বই পড়েছি। এসব বইগুলি এক বা একাধিক বিশেষ বিষয় নিয়ে লেখা। মহান আল্লাহ আমাদের জীবন পরিচালনার জন্য যে কিতাব পাঠিয়েছেন তা বুঝে পড়া হয় নি। তেলওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ছোট বেলায় আমপারা থেকে সালাত পড়ার জন্য অনেক সূরা মুখস্থ করতে হয়েছিল। কোনটিরই অর্থ জানতাম না। শুধু জানতাম কোন আয়াত বা কোন সূরা পড়লে পার্থিবভাবে লাভবান হব এবং আমার পূণ্যের পাল্লা ভারী হবে। আধ্যাত্মিকতার কোন ছোঁয়া ছিল না। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান (Rituals) পালন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ধর্মকে লালন ও পালন করতে শিখিনি।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সুশিক্ষা, কর্মক্ষমতা, স্বচ্ছলতা, মর্যাদা থাকা সত্বেও মনে সব সময় অপূর্ণতা ও অতৃপ্তি থেকে যায়। সব সময় মৃত্যুর কথা স্মরণ হতে থাকে। তাই পবিত্র কুরাআনুল করীম ও তার তাফসীর এবং সে সাথে হাদীস বুঝে পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমি প্রধানত হারমাঈনীশ শরীফাইন বাদশাহ ফাহদ ইবনে আবদুল আজীজের নির্দেশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত এবং.হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ) লিখিত মাআরেফুল কুরআনের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর অনুসরণ করেছি। সে সাথে আরো কয়েকজনের অনুবাদ ও তাফসীর পড়ি। সহীহ উচ্চারণে কুরআন তেলওয়াত ও কুরআনিক আরবী গ্রামার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেই। এখনো শিখছি।
আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি, "মৃত্যু কোন শুরুর শেষ নয় বরং তা হচ্ছে এক অন্তিম যাত্রার সূচনা মাত্র। মানুষের জীবন এই দুনিয়া ও আখেরাত নিয়ে বিস্তৃত। পার্থিব জীবনটাই শেষ নয়। আখেরাতের আরেকটি জীবন আছে। আল্লাহ শুধু আমাদের মানবাকৃতি দান করেন নি, তিনি আমাকে 'রুহ' দান করেছেন যার কোন মৃত্যু নেই।"
কুরআনের মূল আলোচিত বিষয় হচ্ছে মানুষ। এই মানুষ কিভাবে তার জীবন পরিচালনা করবে তার সর্বোত্তম দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এই কুরআনুল করীমে। এ ছাড়া মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, চরিত্র, আচরণ, অতীতের বিভিন্ন জাতির ঐাতহাসিক ঘটনা, তার পরিণতি, এই বিশ্ব জগতের গঠন, নিদর্শন সমূহ আলোচনা করা হয়। আল-কুরআন মানুষের জন্য জীবন সংবিধান ও সত্‌পথের দিশারী।
দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলাম। ছাত্রীজীবন থেকে শিক্ষকতা জীবন - সব সময় নোট করা ছিল আমার অভ্যাস। একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে কুরআন পড়ে যা বুঝেছি, উপলব্ধি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি তা নোট করি। চুহাত্তর বছর বয়সে পদার্পন করে ভাবলাম শুধু খাতায় নোট না করে কম্পু্টরে করি যাতে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারি।
মহান আল্লাহ আমাকে ভুল জানা ও বোঝা থেকে রক্ষা করুন।
আমি এখানে লিখিত কুরআনের আয়াতগুলি বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত আল কুরআন: ডিজিটাল থেকে নিয়েছি।

ভূমিকা

আ'উযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাযীম। (ইসতি'আযাহ)
বিতাড়িত শয়তানের হাত হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে কুরআন পড়া শুরু করতে হয়। সূরা তাওবা বাদে কুরআনের প্রতিটি সূরা "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" (তাসমিয়াহ) দিয়ে শুরু হয়।
এই  আয়াতটি সূরা নামলের আয়াতের একটি অংশ এবং দুটি সূরার মাঝখানে একটি পূর্ণঙ্গ আয়াত। 
বিসমল্লিাহ বাক্যটি তিনটি শব্দ নিয়ে গঠিত। 
  1. 'বা বর্ণ :  এর অনেক অর্থ হতে পারে। এখানে দুটো বস্তুর সংযোজন, কোন বস্তুর সাহায্য নেয়া বা কোন বস্তু থেকে বরকত হাসিল করা। 
  2. ইসম: এর অর্থ অনেক ব্যপক। আমরা আল্লাহর নামকে ধরে নিতে পারি। 
  3. আল্লাহ : এ নামটি আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয়।   এর কোন দ্বিবচন বা বহুবচন নেই। 
এই তিনটি শব্দ আমরা একত্রে বলি বিসমিল্লাহ। যার অর্থ আল্লাহর নামের সাহায্যে, আল্লাহর নামের সাথে এবং তাঁর নামের বরকতে। 
এটা বিশ্বাস যে 'বিসমিল্লাহ' বলার সাথে সাথে শয়তান দূর হয়ে যায়। 

আমার অনুধাবন :

  • আল্লাহর উপর ভরসা রেখে একমাত্র তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম সব কাজে বরকতের উত্‌স। 
  • বিসমিল্লাহ প্রত্যেক কাজকে আল্লাহর রঙ্গে রঞ্জিত করে মানুষের কাজকে শিরক হতে দূরে রাখে। 
  • আল্লাহর অসীম শক্তি ও অপার করুণার সাথে নিজের কাজকে সংযুক্ত করতে হলে 'বিসমিল্লাহ'  বলে শুরু করতে হবে। 
  • আমাদের যে কোন ছোট-বড় সব কাজ যেমন পানাহার, লেখা-পড়া, ভ্রমণ, ঘুমানো, বাজার করা - যে কোন কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। 

__________________________________________________________________________

সূরা আল-ফাতিহা -১

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মক্কায় অবতীর্ণ: ৭ আয়াত। 
 'ফাতিহা' আরবী শব্দটির অর্থ হল প্রারম্ভিকা বা শুরু। এই সূরাটি আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে বান্দার শ্রেষ্ঠ দোয়া। এই সূরাটি একদিকে আল্লাহর শেখানো দোয়া করার পদ্ধতি এবং অপরদিকে কুরআনের ভূমিকা উভয়ই।
৭ আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি প্রতিটি সালাতের, প্রতিটি রাকাতে পড়তে হয়।  

দয়াময়,পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 

  1. সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই,
  2. যিনি দয়াময়, পরম দয়ালু, 
  3. কর্মফল দিবসের  মালিক। 
  4. আমরা শুধু তোমারই 'ইবাদত করি এবং শুধু  তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। 
  5. আমাদেরকে  সরল পথ প্রদর্শন কর,  
  6. তাহাদের পথ, যাহাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করিয়াছ, 
  7. তাহাদের পথ নহে, যাহারা ক্রোধ-নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।

আয়াত অনুযায়ী  আলোচ্য বিষয়: 

১ হতে ৩ নং আয়াত : আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা। 
  • সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর ।
  • তিনি  জগত্‌সমূহের রব বা প্রভু। 
  • তিনি পরম করুণাময় (রহমান) 
  • অসীম দয়ালু (রহীম)। 
  • তিনি বিচার দিনের মালিক। এ দিন মহান আল্লাহ মানুষের ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান দিবেন।
৪ র্থ আয়াতে :আল্লাহর একাত্ববাদের ঘোষণা।  
  • বান্দারা একমাত্র আল্লাহকে উপাস্য হিসাবে মানে। 
  • একমাত্র তাঁর গোলামী করে। 
  • একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। 
৫ হতে ৭ নং  আয়াত: মানুষের পক্ষ হতে আল্লাহর নিকট হিদায়েত  প্রার্থনা । 
  • বান্দা আল্লাহর কাছে জীবন পরিচালনার জন্য সরল ও সঠিক পথ দেখিয়ে দেবার জন্য প্রার্থনা করছে।
  • বান্দা যে পথে চললে তাঁর উপর আল্লাহর অনুগ্রহ নাযিল হয়। 
  • বিপথগামীদের  পথে নয়  কারণ সে পথে চললে পথভ্রষ্ট হয় এবং  আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। 
বি.দ্র: হিদায়েত শব্দের দুটি অর্থ আছে। প্রথমটি হচ্ছে গন্তব্যের দিকে পথ নির্দেশ। অর্থ্যাত্‌ কুরআনের নির্দেশনা দ্বারা শুধু তারা উপকৃত হতে পারে যারা 'আল্লাহ ভীরু'। সাধারণভাবে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী নির্বিশেষে সবার জন্য পথ প্রাপ্তির সুযোগ আছে এ কুরআনে। 

দ্বিতীয়টি হচ্ছে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেন তারাই যাদের বিবেকের আয়না অমলিন এবং তমসা মুক্ত। 

আল্লাহর নাম:

রহমান ও রহীম। ( দয়াময়, পরম দয়ালু)

আমার অনুধাবন: 

  • মহান আল্লাহর নাম (তাসমিয়া)  নিয়ে সব কাজ শুরু করতে হবে এবং  মনে রাখতে হবে আল্লাহ সকল প্রশংসার দাবীদার। 
  •  একমাত্র আল্লাহর এবাদত করতে হবে। 
  •  আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ এবাদতের উপযোগী নয়। 
  • একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। 
  • এই পৃথিবীতে জীবন পরিচালনায় সরল ও সঠিক পথে থাকার জন্য আল্লাহর হিদায়েত কামনা করতে হবে। 
  • আল্লাহ যাদের নিয়ামত দিয়েছেন তাদের সঠিক পথ প্রার্থনা করতে হবে। 
  • আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করতে হবে। তাই অভিশপ্ত ও ভ্রান্ত পথ অবলম্বনকারীদের পথ থেকে দূরে থাকার সাহায্য কামনা করতে হবে। 
  • আল্লাহর  ইবাদত করতে হলে প্রথমে তাঁর সত্তা ও গুণাবলীর পরিচয় দিয়ে তা স্বীকার করত: আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং প্রকৃত সত্য সন্ধানীরূপে তাঁর কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করা। 
  • আল্লাহর রহমতে আশাবাদী থাকতে হবে। 


——+——

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url